বিজিএমইএ’র সঙ্গে গভর্নরের বৈঠক, সমাধানের আশ্বাস বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রতিবেদক: একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে তারল্যসংকটে ভুগছে। এর প্রভাব পড়েছে এসব ব্যাংকের গ্রাহক তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আয় দেশে এলেও ব্যাংকগুলো সময়মতো অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। এমনকি নতুন ঋণপত্রও খুলতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানাগুলোর আর্থিক কার্যক্রমে সৃষ্ট অচলাবস্থার সমাধানে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তাঁরা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলো সময়মতো শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। এতে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে, যা আইনশৃঙ্খলার জন্যও হুমকি হয়ে উঠছে।

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ নজরুল ইসলাম মজুমদার, আর বাকি চার ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করত চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, ফাহিমা আক্তার, এ বি এম সামছুদ্দিন, রিও ডিজাইনের চেয়ারম্যান মো. হারুক আহমেদ, ও’ডেল অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মোহাম্মদ মোহিত, ডে অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনওয়ার হোসেন পাটওয়ারি এবং একেএইচ ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম।

বিজিএমইএর নেতারা বৈঠকে জানান, দুর্বল ব্যাংকের কারণে যেসব পোশাক রপ্তানিকারক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। ক্রেতাদের আস্থা কমছে, যা শিল্পের জন্য অশুভ সংকেত। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্‌ণ শিল্পে পরিণত হবে এবং বহু শ্রমিক কর্মসংস্থান হারাবেন। ফলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বৈঠকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, সাময়িকভাবে ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের প্রাপ্য টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে রপ্তানিকারকদের জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটানো যায়। পরে সমস্যার স্থায়ী ও চূড়ান্ত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত সরকারের আমলে অনিয়ম–দুর্নীতির কারণে এসব ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছিলেন না। ঋণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নেয়। এজন্য ইতিমধ্যে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরাদ্দ পেলে প্রথমে ছোট আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।