বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে

অনলাইন ডেক্স: চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে, তবে ঋণ পরিশোধের চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এর তথ্য অনুযায়ী,ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.২%,অর্থছাড় কমেছে ১০.৪%,ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩০.৩%।

ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট ২.৩৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭.১৭ বিলিয়ন ডলার।

অর্থছাড়ের ক্ষেত্রেও ছিল নিম্নগতি—চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪.৩৯৮ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে—গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১.৮৫৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ২.৪১৮ বিলিয়ন ডলার।আসল পরিশোধ ১.০৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৫৪৪ বিলিয়ন ডলার।সুদ পরিশোধ ১৬০.৭ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৭৪ মিলিয়ন ডলার।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার বৈদেশিক ঋণ কম নেওয়ার কৌশল নিয়েছে, কারণ—ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে,অনেক প্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়েছে,শুধুমাত্র জরুরি বাজেট সহায়তা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ঋণ গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া, নতুন প্রকল্প অনুমোদন ও ঋণচুক্তি স্বাক্ষরেও ধীরগতি এসেছে, যার ফলে ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে।

সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর মতো বৈদেশিক ঋণে পরিচালিত প্রকল্পের বাস্তবায়নেও ধীরগতি দেখা গেছে।অনেক প্রকল্পে ঠিকাদার চলে গেছে,প্রকল্প পরিচালকদের পরিবর্তন হয়েছে।রাজনৈতিক অস্থিরতা উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে।

ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থছাড় কমেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন,সরকার নতুন প্রকল্প গ্রহণে সতর্ক হচ্ছে, কারণ অতীতে প্রকল্প-নির্ভর দুর্নীতি হয়েছে।তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো— ঋণ পরিশোধের চাপ দিন দিন বাড়ছে।যদি বৈদেশিক ঋণ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু ঋণ কম আসলে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক—বিশ্বব্যাংক: ৯৪৪.৫ মিলিয়ন ডলার (এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা)।এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৭০০ মিলিয়ন ডলার (এর মধ্যে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা)।জাপান ২৫২.১২ মিলিয়ন ডলার।এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক  ১৬০ মিলিয়ন ডলার।

অর্থছাড়ের দিক থেকে—ADB সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে (১.০৯ বিলিয়ন ডলার),বিশ্বব্যাংক ৮৬৭.৬৪ মিলিয়ন ডলার,জাপান ৬৯৬.৩২ মিলিয়ন ডলার,রাশিয়া ৫৩৬.৮৭ মিলিয়ন ডলার,চীন: ২৬৭.৮১ মিলিয়ন ডলার,ভারত ৮০.১৪ মিলিয়ন ডলার

সরকার ঋণ পরিশোধের চাপ সামলাতে নতুন ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি কমেছে। তবে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।