
প্রতিবেদক: বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ৪০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, সুদ ও আসল মিলিয়ে মোট পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৮ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) তুলনায় প্রায় ৭১ কোটি ডলার বেশি। ওই সময় পরিশোধ করা হয়েছিল ৩৩৭ কোটি ডলার।
ইআরডির হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে গড়ে প্রতি মাসে ৩৪ কোটিরও বেশি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ হয়েছে ২৫৯ কোটি ডলার এবং সুদ বাবদ ১৪৯ কোটি ডলার।
তবে পরিশোধের হার বাড়লেও বিদেশি ঋণ ছাড় ও নতুন ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ঋণ ছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৭০২ কোটি ডলার। একই সময়ে ঋণের নতুন প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৪৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৪৪ কোটি ডলার কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ ছাড় ছিল ৮৫৭ কোটি ডলার এবং প্রতিশ্রুতি ছিল ৮৩২ কোটি ডলার।
ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছিল শীর্ষে, যারা একাই ২৫২ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে। এরপর রয়েছে বিশ্বব্যাংক ও জাপান। তবে ভারত, চীন ও রাশিয়া এই অর্থবছরে নতুন করে কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
গত এক দশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ প্রায় চার গুণে পৌঁছেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল। সেই তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০১ কোটি ডলারে। ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে হয় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার এবং ২০২৪-২৫ সালে এসে তা পৌঁছেছে ৪০৯ কোটি ডলারে।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বড় প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল ও মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পগুলোর কিস্তি এখন পরিশোধের পর্যায়ে এসেছে। ফলে আগামীতে বিদেশি ঋণ পরিশোধ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।