
প্রতিবেদক: বাংলাদেশের নতুন আমদানি নীতি আদেশ ২০২৫-২৮ এ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা যুক্ত হচ্ছে, যার আওতায় বিদেশের কোনো স্বীকৃত পরীক্ষাগারে একবার পরীক্ষা করা হলে সেই পণ্য দেশে আর পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে না। বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সচিবালয়ে ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪-এর সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যদিও তা তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। সরকার চাচ্ছে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের শুরু, অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে নতুন আমদানি নীতি কার্যকর করতে। ইতোমধ্যে এ নীতির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪-এর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। নতুন আদেশ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো নীতিই বলবৎ থাকবে। আগের নীতি আদেশটি (২০১৫-১৮) নিয়মিত মেয়াদ শেষের সাড়ে চার বছর পর, ২০২২ সালের মে মাসে জারি করা হয়েছিল। তাই এবার দ্রুত কার্যকর করার লক্ষ্যে আগেই কাজ শুরু হয়েছে।
নতুন নীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে তার মধ্যে রয়েছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্নের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ করা। আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যের ছাড়পত্র প্রদানে সরকার অনুমোদিত ল্যাবরেটরির তালিকা ও খাদ্যমান যাচাইয়ে অভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের পরামর্শে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে ব্যবহৃত ইথাইলিন ও প্রপাইলিন নামক দুটি কাঁচামাল বর্তমান আমদানি নীতিতে না থাকায় তা যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশ হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন মদ ও বিয়ারের এইচএস কোডে ২২.০৮ নম্বর যুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে, যা বিবেচনায় রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় চাল ও মসলা রপ্তানিতে মিথাইল ব্রোমাইড আমদানিনিষেধ থাকায় সমস্যা হচ্ছে—এমন অভিযোগ উঠেছে, যার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হবে। পানামা সিএনজি কনভার্সন গ্যাস সিলিন্ডার আমদানির জন্য আলাদা এইচএস কোড চায়, আর ব্যাটারি উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং নিশ্চিত করে পুরোনো ব্যাটারি আমদানির অনুমতি চায়।
নতুন নীতিতে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার পুরোনো কাপড় আমদানিতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এছাড়া রিকন্ডিশন্ড পণ্য, পুরোনো কম্পিউটার, শিল্প স্লাজ, রাসায়নিক কীটনাশক, উচ্চমাত্রার হর্ন, পলিথিন ব্যাগ, দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনযুক্ত যানবাহন ইত্যাদি পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশের মানচিত্র সঠিকভাবে প্রদর্শন না করা ম্যাপ, অশ্লীল ও উস্কানিমূলক সাহিত্য, পোস্টার, ভিডিও, হরর কমিকস ইত্যাদিও নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় থাকবে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের আমদানিতে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণে ধাপে ধাপে এ পদ্ধতি তুলে দেওয়ার কথা নীতিতে উল্লেখ থাকবে।
নতুন আমদানি নীতিতে চলচ্চিত্র আমদানিতে শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত না হলে উপমহাদেশীয় ভাষার কোনো চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে না। তবে দেশের চলচ্চিত্র রপ্তানির বিপরীতে সাফটা অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো থেকে অনাপত্তি সাপেক্ষে সমসংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে।
সব ধরনের খেলনা ও বিনোদন সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়স শ্রেণির উল্লেখ এবং প্লাস্টিকের খেলনায় ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়’ এমন সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বেসামরিক বিমান বা হেলিকপ্টার আমদানির ক্ষেত্রেও শর্ত আরোপ করা হবে। পুরোনো জাহাজ আমদানিতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ‘বিষাক্ত বা বিপজ্জনক বর্জ্য পরিবহন করা হয়নি’ মর্মে প্রত্যয়ন দিতে হবে।
এদিকে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকিন আহমেদ অভিযোগ করেন, “নতুন আমদানি নীতির খসড়া শিগগির উপদেষ্টা পরিষদে যাবে বলে শুনেছি। কিন্তু এ নিয়ে ভালো করে কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়নি। যদি আরও একটি বৈঠক হয়ও, সেখানে ‘দুই মিনিট’ সময় দিলে তেমন কিছু বলা সম্ভব হবে না।”
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, নীতির চূড়ান্ত খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানোর আগে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হতে পারে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী সপ্তাহে।