
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নেওয়া নতুন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। নীতিগত অস্থিরতা, হঠাৎ চুক্তি বাতিল এবং টেকসই আর্থিক কাঠামোর অভাবকে এর মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত ২ জুন পিডিবি ৩৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি গ্রিড-সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। ছয়বার সময় বাড়ানোর পরেও মাত্র ২০টি দরপত্র জমা পড়ে—সবই দেশীয় কোম্পানির পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর, বিশেষ করে চীনের, অংশগ্রহণ ছিল শূন্য। অথচ পূর্ববর্তী বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলোতে অন্তত চারটি চীনা কোম্পানি লেটার অব ইনটেন্ট (LoI) পেয়েছিল।
পিডিবির তথ্যমতে, ৯৫টি দরপত্র ফর্ম বিক্রি হলেও প্রকৃত জমা পড়ে মাত্র ২০টি। এর মধ্যে ৬টি প্রকল্পে মাত্র একজন করে দরদাতা ছিলেন, যার মধ্যে দুটি প্রকল্পে একক দরদাতা ছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হঠাৎ করে আগের ৩১টি প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।
আইইইএফএ’র প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, “এই বিডে কোনো সার্বভৌম গ্যারান্টি ছিল না, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় বাধা। ব্যাংক অর্থায়নের সুযোগ না থাকা, জমির জটিলতা ও দুর্বল আর্থিক মডেলও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘গ্রিন সোলার এনার্জি’র সাবেক উপদেষ্টা শাকির আহমেদ বলেন, “একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের ওপর গভীর আস্থার সংকট তৈরি করেছে।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে সরকার ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’-এর আওতায় স্বাক্ষরিত ৩১টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করে। এতে বহু বিদেশি ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যারা জমি কেনা ও অফিস স্থাপনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ করে ফেলেছিল।
এই চুক্তিগুলোতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা, সরঞ্জাম সরবরাহ, স্থাপন, পরীক্ষা ও কমিশনিংসহ নানা ধাপের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। জমি অধিগ্রহণ ও অর্থায়নের দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট ডেভেলপারদের ওপর।
দরপত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা বিষয়টি বিশ্লেষণ করছি এবং ভবিষ্যৎ দরপত্র রাউন্ডে আরও বেশি দরদাতা আকৃষ্টে কৌশল গ্রহণ করব।”
পিডিবি’র সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহ মূলত নীতিগত অস্থিরতা, চুক্তি বাতিল এবং আর্থিক গ্যারান্টির অভাবে তৈরি হওয়া আস্থার সংকট থেকেই জন্ম নিয়েছে। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতি, স্বচ্ছতা ও আর্থিক কাঠামোর জোরদার পুনর্গঠন।