
প্রতিবেদক: পাইকারি (বাল্ক) বিদ্যুৎমূল্যের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। নতুন এই কাঠামো অনুযায়ী, ১,২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.৪৫ টাকা। যা রামপাল কেন্দ্রের ১৩.৫৭ টাকা ইউনিটমূল্যের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কম (৫.১২ টাকা)।
বিপিডিবি আলোচনা ও মূল্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাতারবাড়ীর মূল কোম্পানি ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)’ এর সঙ্গে ট্যারিফ চূড়ান্ত করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিপিডিবি জানিয়েছিল, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ১২ টাকা। সেই তুলনায় মাতারবাড়ীর ট্যারিফ প্রায় ৪২ শতাংশ কম।
মাতারবাড়ী বিদ্যুতের এই নতুন মূল্য কাঠামো অনুমোদনের জন্য ইতিমধ্যে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা বর্তমানে পর্যালোচনার অপেক্ষায় রয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, “আমরা মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮.৪৫ টাকা নির্ধারণ করেছি, যা অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় অনেক কম। আশা করছি, এই ট্যারিফ কাঠামো খুব দ্রুতই অনুমোদিত হবে।
মাতারবাড়ীর এ সাশ্রয়ী ট্যারিফ এখন সরকারের জন্য এক নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। এজন্য সরকার অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র—যেমন এসএস পাওয়ার (এস আলম গ্রুপ), রামপাল, পায়রা এবং ভারতের আদানি—এর সঙ্গেও বিদ্যুৎমূল্য নিয়ে নতুন করে দরকষাকষির চিন্তাভাবনা করছে। কর্মকর্তারা বলছেন, “যদি মাতারবাড়ী ৮.৪৫ টাকায় বিদ্যুৎ দিতে পারে, তাহলে অন্যরা কেন পারবে না?
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, “মাতারবাড়ীর এই ট্যারিফ হবে আলোচনার বেঞ্চমার্ক। এর মাধ্যমে আমরা মূল্য কাঠামোর যৌক্তিক পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতে পারব।
বর্তমানে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ কেনার খরচ পড়ছে ১২ থেকে ১৪ টাকা, যা বিপিডিবির জন্য দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত বিপিডিবি আপাতত কেবল কয়লা আমদানির খরচ মেটাতে সিপিজিসিবিএলকে অর্থ দিচ্ছে। অনুমোদন পেলে মাতারবাড়ী থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য বকেয়া হিসাব করে পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হবে।
বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা এখন যে অর্থ পরিশোধ করছি, তা নির্ধারিত ট্যারিফের চেয়ে কম। এটা কেবল কয়লা আমদানি এবং কেন্দ্র সচল রাখার জন্য দেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত ট্যারিফ অনুমোদনের পর কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের হিসাব করে বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
উল্লেখযোগ্য যে, প্রকল্পের ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোকিওরমেন্ট ও কনস্ট্রাকশন) ধাপে বিলম্বের কারণে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, মাতারবাড়ীর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎমূল্য ১৩ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তবে রেজাউল করিম জানান, আমরা বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়-সাশ্রয়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। প্রকৃত খরচ বিশ্লেষণ করে এমন ট্যারিফ কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে, যাতে সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ সর্বনিম্ন থাকে।