
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বাকি কিস্তির অর্থ পাবে কি না, তা নির্ভর করছে মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ওপর। তবে বাংলাদেশ এখনই মার্কিন ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে রাজি নয়। এ নিয়ে সোমবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নেতৃত্ব দেন। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও কবির আহমেদ। বৈঠকটি দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হলেও শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্র জানায়, আলোচনা অব্যাহত থাকবে, তবে এখনো চূড়ান্ত সমাধান আসেনি।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত ছিল বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে।
বৈঠকে একটি ১০০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত ‘স্থিতিশীলতা তহবিল’ চাওয়া হয়েছে, যাতে ডলারের দাম বাড়লে ওই তহবিল ব্যবহার করে বাজারে ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। তবে এ প্রস্তাবে এখনো আইএমএফ রাজি হয়নি।
সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি চালু রাখার চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, কঠিন শর্ত অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ কর্মসূচি থেকে সরে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা এ সম্ভাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন, আগের সরকার সংস্কার এড়িয়ে চলায় আজকের সংকট তৈরি হয়েছে। আইএমএফ কর্মসূচি চালু থাকলে কাঠামোগত সংস্কার সম্ভব হবে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। বাকি রয়েছে ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হলেও, সময় পিছিয়েছে একাধিকবার। আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, সরকার আইএমএফকে মুখে যা বলছে, বাস্তবে তা করছে না—এটাই সমঝোতা না হওয়ার মূল কারণ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমছে, এমন পরিস্থিতিতে মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করার উপযুক্ত সময় বলেও তিনি মত দেন।