
প্রতিবেদক:হঠাৎ নীতিমালায় পরিবর্তন এলে বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। এ নিয়ে সব সময়ই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নীতির ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শুল্ক-কর, গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো সেবা পেতে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (BSEZ) পরিদর্শনে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করবে।
চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের অংশ হিসেবে আজ চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৩৬ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বিএসইজেড পরিদর্শনে যান।
প্রথমেই বিএসইজেড কর্তৃপক্ষ তাঁদের অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা ও সেবাসমূহ সম্পর্কে ধারণা দেয়। পরে তাঁরা সিঙ্গারের কারখানা ঘুরে দেখেন, যেখানে মাত্র ২০ মাসে ৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আধুনিক কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে প্রতি মাসে তৈরি হচ্ছে ৫০ হাজার ফ্রিজ ও ১০ হাজার টেলিভিশন।
চীনা তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘জিনিউ বাংলাদেশ লিমিটেড’-এর সিইও নিকোলাস কী বলেন —বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক। তবে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নীতির ধারাবাহিকতা। সরকার যদি এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
চীনের জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন অ্যান্ড স্মার্ট এনার্জি’-এর সেক্রেটারি জেনারেল উইও জিয়ানবো বলেন —বাংলাদেশের বাজারে সম্ভাবনা অনেক। তবে অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তবে বিএসইজেড পরিদর্শনে এসে মনে হয়েছে, এখানে বিনিয়োগের ভালো পরিবেশ রয়েছে।”
প্রবাসী (এনআরবি) বিনিয়োগকারী ইফতেখার মাহমুদ বলেন —বিএসইজেড বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এ ধরনের আরও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব।
আজ বিএসইজেড-এর সঙ্গে সুইডিশ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘নিলর্ন বাংলাদেশ’-এর একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনের জন্য ধাপে ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে। এতে প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
নিলর্ন বাংলাদেশের এমডি মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন —স্বতন্ত্রভাবে কারখানা স্থাপন করতে গেলে অনেক জটিলতা আছে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসব সমস্যা হবে না। সেই বিশ্বাস থেকেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিএসইজেড পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন —বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট। অতীতে বিনিয়োগে যেসব বাধা ছিল, তা দূর করতে সরকার কাজ করছে। ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা ও সুশাসনের অভাব দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।