
প্রতিবেদক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৩৭ কোটি টাকা অনিরীক্ষিত মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার (১৮ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ বি এম রওশন কবীর। প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরের ইতিহাসে এটি জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটির সর্বোচ্চ মুনাফা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিমান সর্বোচ্চ ৪৪০ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।
তবে পদ্মা অয়েল বলছে, বিমানের এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে প্রশ্ন। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে জেট ফুয়েল বিক্রি বাবদ প্রায় ২১০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ না করেই বিমান মুনাফার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল জানায়, জুন মাসের সর্বশেষ হিসাবে বিমানের কাছে তাদের বকেয়া দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান জানিয়েছে, যাত্রী ও গ্রাহকদের আস্থা এবং দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনার কারণে এ রেকর্ড মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়েছে। ১৯৭২ সালে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় দিয়ে যাত্রা শুরু করে বিমান ধীরে ধীরে আজকের আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের আয় দাঁড়িয়েছে ১১,৬৩১.৩৭ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় বেশি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৫ বছরে বিমান মোট ২৬টি বছরে লাভ করেছে।
২০০৭ সালে কর্পোরেশন থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের পর বিমানের পুঞ্জীভূত মোট মুনাফা হয়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা। বর্তমানে বিমানের বহরে রয়েছে ২১টি উড়োজাহাজ, যার মধ্যে ১৯টি নিজস্ব মালিকানাধীন। এগুলোর মধ্যে আছে চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। নিজস্ব রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতার কারণে বিমান ব্যয় সাশ্রয় ও আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমান ৩.৪ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৪৩,৯১৮ টন কার্গো পরিবহন করেছে। কেবিন ফ্যাক্টর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে। জানুয়ারি ২০২৫-এ বিমানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রির রেকর্ড হয়েছে। লাগেজ সরবরাহে দ্রুততা, ইন-ফ্লাইট সেবার মানোন্নয়ন ও বিমানবন্দর প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন যাত্রী সন্তুষ্টি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান কঠোরভাবে মেনে চলায় বিমান প্রশংসনীয় সেফটি রেকর্ড ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দক্ষ ব্যবস্থাপনা, কার্যকর সম্পদ বণ্টন ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এই রেকর্ড মুনাফায় বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে পদ্মা অয়েলের বকেয়া পরিশোধ না করেই মুনাফার ঘোষণা কতটা গ্রহণযোগ্য—সে প্রশ্ন এখনো থেকে যাচ্ছে।