
প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সময় এখন সবচেয়ে অনুকূল। পরিসংখ্যান বলছে, অনেক নারী এখন নিজ উদ্যোগেই ধনী হচ্ছেন—তাঁরা কেবল আর পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে নয়, বরং নিজেদের প্রচেষ্টায় সম্পদশালী হয়ে উঠছেন।
গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৬৫ কোটি ৮০ লাখ নারী উদ্যোক্তা ও কোম্পানির মালিক রয়েছেন। যদিও পুরুষ উদ্যোক্তার সংখ্যা এখনও বেশি—৭৭ কোটি ২০ লাখ, তবে নারীরা দ্রুত এগিয়ে আসছেন। আশাব্যঞ্জক দিক হলো, নারীদের দুই-তৃতীয়াংশ উদ্যোক্তা তাঁদের উদ্যোগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন এবং পুরুষদের তুলনায় বেশি নতুন উদ্যোগ শুরু করেছেন।
এই অগ্রযাত্রাকে স্বীকৃতি দিতে প্রথমবারের মতো ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে ‘বিশ্বের ৫০ জন সবচেয়ে স্বউদ্যোগী ধনী নারী’ তালিকা। তালিকায় যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউ ব্যবসা শুরু করেছেন কোলাজেন বিক্রি করে, কেউ কয়লার খনিতে, কেউ প্রযুক্তি কিংবা ফ্যাশনের জগতে নিজেদের জায়গা গড়েছেন। এ তালিকায় ১৩টি দেশ ও ৪টি মহাদেশ থেকে নারী উদ্যোক্তারা জায়গা করে নিয়েছেন, যদিও আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা এখনো অনুপস্থিত।
তালিকায় ২৪ জন রয়েছেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে, ২০ জন উত্তর আমেরিকা থেকে এবং ৬ জন ইউরোপ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রয়েছে সবচেয়ে বেশি—১৮ জন করে নারী উদ্যোক্তা। এরপর রয়েছে কানাডা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্য (প্রত্যেকে ২ জন করে) এবং অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, ইতালি, রাশিয়া ও ভিয়েতনাম (প্রত্যেকে ১ জন করে)।
তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছেন সুইজারল্যান্ডের রাফায়েলা অ্যাপনটে-ডায়ামান্ট। তিনি ও তাঁর স্বামী মাত্র ২ লাখ ডলার ঋণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ পরিবহন কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি (MSC)। তাঁর বর্তমান সম্পদ ৩৮.৮ বিলিয়ন ডলার।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডায়ান হেনড্রিক্স, যিনি ছাদ ও বাড়ির বাইরের নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ABC Supply-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২২.৩ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন তালিকায় আরও রয়েছেন অপরাহ উইনফ্রে, শেরিল স্যান্ডবার্গ প্রমুখ।
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ন্যূনতম সম্পদের সীমা ২.১ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে কিম কার্ডাশিয়ান, টেইলর সুইফট বা গুইন শটওয়েল এখনো এই তালিকায় জায়গা পাননি।
চীনের তালিকায় শীর্ষে আছেন ঝোং হুইজুয়ান—একসময় রসায়নের শিক্ষক ছিলেন, পরে প্রতিষ্ঠা করেন হানশ ফার্মাসিউটিক্যাল। তাঁর কোম্পানি এখন ফুসফুস ক্যানসার, সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ওষুধ তৈরি করে এবং বার্ষিক আয় ১৭০ কোটি ডলার।
চীনের সমাজে নারীর অবস্থান সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার অধ্যাপক মিং জার চেন লিখেছেন, চীনা সংস্কৃতিতে নারী ঐতিহাসিকভাবে ক্ষমতার জায়গায় থেকেছেন, এমনকি ‘স্ত্রী’ ও ‘সমান’ শব্দ দুটি চীনা ভাষায় একার্থক।
তালিকায় ১৪ জন নারী প্রযুক্তি খাতে সফলতা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ঝোউ কুনফেই, যিনি একসময় সাধারণ শ্রমিক ছিলেন। এখন তাঁর কোম্পানি লেন্স টেকনোলজি অ্যাপল, স্যামসাং ও টেসলার জন্য টাচস্ক্রিন সরবরাহ করে। কোম্পানির বার্ষিক আয় ৯৫০ কোটি ডলার।
তালিকার সবচেয়ে কম বয়সী নারী হলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলানি পারকিনস (৩৮)। তিনি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জনপ্রিয় ডিজাইন সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যানভা। দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছেন রাশিয়ার তাতিয়ানা কিম (৪৯), যিনি ইংরেজি শিক্ষকতা থেকে উঠে এসে এখন দেশটির সবচেয়ে বড় অনলাইন খুচরা প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ড বেরিস পরিচালনা করছেন।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, নারী উদ্যোক্তারা অনেক দূর এগিয়ে গেলেও পুরুষ ও নারীর মধ্যে সম্পদের ব্যবধান এখনো বড় রয়ে গেছে। তবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে নীতিগত উদ্ভাবনে নারীরা যে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন, তা ভবিষ্যতের জন্য বড় আশা তৈরি করছে।