বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

প্রতিবেদক: দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও গত বছর (২০২৪) বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশের বাজার হিস্যা দশমিক ৪৮ শতাংশ পয়েন্ট কমে গেছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম, আর শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন—যাদের হিস্যাও ২ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) চলতি মাসে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান: ২০২৪ সালের মূল অন্তর্দৃষ্টি ও প্রবণতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক পণ্য ও সেবা বাণিজ্য ৪ শতাংশ বেড়ে ৩১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পণ্য বাণিজ্য বেড়েছে ২ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৯ শতাংশ। ২০০৫ সালের পর সেবা খাতের অংশ ২৬.৪ শতাংশে গিয়ে সর্বোচ্চ হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ৫৫৭.৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ টানা দুই বছর ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালে রপ্তানি হয়েছে ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.২১ শতাংশ। তবে বাজার হিস্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৯০ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ছিল ৭.৩৮ শতাংশ।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমতে পারে এবং এতে ভিয়েতনামের রপ্তানি বাড়তে পারে। তবে এই বছরও দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ও দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে গত বছর আমদানি-রপ্তানিতে বাধা আসে। শ্রমিক আন্দোলন ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটেও তৈরি পোশাক খাত ব্যাহত হয়।

এদিকে রপ্তানি হিসাবেও অসঙ্গতি ছিল। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, ইপিবি অতিরিক্ত রপ্তানি দেখাচ্ছে। পরে সেটি সংশোধন করা হয়। তবে ২০২২ সালে ডব্লিউটিও ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি দেখালেও বাস্তব চিত্র ছিল কম, এনবিআরের চেয়ে তিন অর্থবছরে ইপিবি ২,২৬১ কোটি ডলার বেশি দেখিয়েছিল।

চীন এখনো শীর্ষ রপ্তানিকারক হলেও তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রায় স্থির। ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি করেছে ১৬৫ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.৩০ শতাংশ। ২০১৭ সালে চীনের বাজার হিস্যা ছিল ৩৫ শতাংশ, যা এখন ২৯.৬৪ শতাংশে নেমেছে।

ভিয়েতনাম ২০২৪ সালে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ। বাজার হিস্যা কিছুটা বেড়ে ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তারা ২০২০ সালে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছিল, পরে বাংলাদেশ আবার সেই স্থান পুনরুদ্ধার করে।

চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে তুরস্ক (১৮ বিলিয়ন ডলার) ও ভারত (১৬ বিলিয়ন ডলার)। তুরস্কের রপ্তানি ৪ শতাংশ কমেছে, ভারতের বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে রয়েছে কম্বোডিয়া (১০ বিলিয়ন), পাকিস্তান (৯ বিলিয়ন), ইন্দোনেশিয়া (৯ বিলিয়ন) এবং যুক্তরাষ্ট্র (৭ বিলিয়ন)।