বিশ্ববাজারে সোনার দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্ব

প্রতিবেদক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে সোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনার ভান্ডার বৃদ্ধি এবং মূল্য স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) “সেন্ট্রাল ব্যাংক গোল্ড রিজার্ভ সার্ভে ২০২৫” অনুযায়ী, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বর্ণ মজুত বাড়াতে আগ্রহী। এছাড়া ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে তাদের কাছে আগামী ১২ মাসের জন্য পর্যাপ্ত সোনা মজুদ রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করায় বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ ডলারের বিকল্প হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইনভেস্টর ডট কমের তথ্য মতে, ২০২২ সালের শেষে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা সোনা ছিল সরকারি রিজার্ভের প্রায় ২০ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের শেষে কমে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ধারণা করছে, এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ৯০০ টন সোনা ক্রয় করবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনার প্রতি এই আগ্রহের মূল কারণ হলো ডলারের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আস্থা কমে যাওয়া। বিশেষ করে ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলো—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—ডলারের বিকল্প হিসেবে সোনা সংগ্রহে প্রবল আগ্রহী। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা সপ্তম মাসে তাদের সোনা মজুত বৃদ্ধি করেছে, যা ৩.২৮৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। একই সময়ে চীনের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের পরিমাণও কমেছে, যা ডলারনির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

ডব্লিউজিসির সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি খনি থেকে সোনা সংগ্রহ করে থাকে, যেখানে বড় খনি থেকে ৩৭ শতাংশ এবং ছোট খনি থেকে ১৬ শতাংশ সোনা কেনা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ তথ্য সামান্য পার্থক্য রয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি সর্বকালের উচ্চতায় পৌঁছে ৩,৫০০ ডলারে ওঠে; বর্তমানে দাম আউন্সপ্রতি প্রায় ৩,২৫০ ডলার। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয় অব্যাহত থাকলে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আর্থিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন।

আন্তর্জাতিক অস্থিরতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার প্রবণতা বাড়তে থাকায় বিশ্ববাজারে সোনার দাম নিয়ন্ত্রণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।