
প্রতিবেদক: বীমা খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন ও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংশোধিত আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং বর্তমানে সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষজ্ঞ ও জনগণের মতামত গ্রহণ চলছে।
আইডিআরএ সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমা আইন পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো বিমা খাতের উন্নয়ন, গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং আইনটিকে যুগোপযোগী করা। পাশাপাশি বিমা খাতের দুর্বলতা ও অস্পষ্টতা দূর করতেই সংশোধন করা হচ্ছে। আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম বলেন, “২০১০ সালের আইনের পর বহু বছর পেরিয়ে গেছে, তাই হালনাগাদ করার সময় এসেছে। আইডিআরএর ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন, কারণ বর্তমান আইনে কোনো বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া সম্ভব নয়।
আইন সংশোধনের প্রস্তাবে উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিমা কোম্পানি কেন্দ্রীভূত হবে না। পরিবারের সদস্যদের হাতে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রাখা যাবে না। পাশাপাশি আইডিআরএ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে যে, বিমা কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলি শর্ত ও নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা।
বর্তমানে দেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি জীবন বিমা এবং ৪৬টি সাধারণ বিমা প্রতিষ্ঠান। গত ১৪ বছরে ২৬ লাখের বেশি বিমা পলিসি বাতিল হয়েছে। ২০২৪ সালে বিমা দাবি নিষ্পত্তির হার মাত্র ৫৭ শতাংশ, যেখানে মোট দাবির বিপরীতে অর্ধেকেরও কম অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।
আইনে ‘পরিবার’ সংজ্ঞায় সংশোধন করে জামাতা ও পুত্রবধূকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, আর ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল সবাই’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। বেআইনি বিমা ব্যবসার তথ্য পত্রিকায় ঘোষণা করার ক্ষমতা আইডিআরএকে দেয়া হচ্ছে, তবে কোম্পানিকে পূর্বে মতামত দেওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। এছাড়া কোম্পানির নাম পরিবর্তনে আইডিআরএর অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হবে।
বিমা কোম্পানি বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের স্বার্থহানি করলে আইডিআরএ সেই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন বা ভেঙে দিতে পারবে, তবে দুই বছরের মধ্যে পুনর্গঠন নিশ্চিত করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র অনুপস্থিতি দেখলে কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট অফিসে প্রবেশ করে তল্লাশি চালাতে পারবেন এবং দাবি নিষ্পত্তির জন্য কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রিও করতে পারবেন।
জীবনবিমা এজেন্টদের কমিশন কাঠামোতেও পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে। প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ওপর কমিশন কমিয়ে ৩৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করা হবে, কিন্তু নবায়নের ক্ষেত্রে কমিশন বাড়ানো হবে; দ্বিতীয় বছরে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়বে, পরবর্তী বছরে ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।
আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিমা কোম্পানির মূলধন সংরক্ষণ ব্যর্থ হলে নতুন পলিসি বিক্রি বা প্রিমিয়াম গ্রহণ বন্ধের ব্যবস্থা থাকবে। জরিমানা হবে ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত, এবং মূলধন ঘাটতি পূরণে বিলম্ব হলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে। সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা আর্থিক জরিমানাসহ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত যোগ্যতা ও মেয়াদ সম্পর্কেও বিধান রয়েছে। বিমা কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যান হতে হলে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং পরিচালকের সর্বোচ্চ মেয়াদ সর্বোচ্চ ছয় বছর হবে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারবেন না।
আইন সংশোধনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি সাঈদ আহমেদ বলেন, আমরা সদস্যদের মতামত নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইডিআরএকে জানাব। আমরা চাই বিমা খাতের উন্নয়ন ঘটুক এবং আইন যুগোপযোগী হোক।