বেসরকারি বিনিয়োগের পতন: অর্থনীতিতে শঙ্কার ছায়া

প্রতিবেদক: মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শতকরা হিসাবে বেসরকারি বিনিয়োগ গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির মাত্র ২২.৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের ২৩.৯৬ শতাংশের চেয়ে কম। এটি ২০২০-২১ অর্থবছরের করোনা মহামারির সময়ের পর সবচেয়ে নিম্ন স্তর।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘এটি কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থাহীনতার প্রতিফলন।’ তিনি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহের অসামঞ্জস্য, আমদানি ও তারল্য সংকট এবং ঋণের সুদহার বৃদ্ধিকে ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধি ও আস্থাহীনতার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও ব্যবসায়িক আস্থাকে ক্ষুণ্ন করছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগকে জিডিপির ২৮.২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ছিল, যা বর্তমানে ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ কমেছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়া কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য উদ্বেগের বিষয়।’ তিনি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঋণের সুদের বৃদ্ধি এবং কাঠামোগত সংস্কারের ধীরগতিকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বেসরকারি বিনিয়োগের এই পতনকে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার স্পষ্ট সতর্কবার্তা হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ কাজের সুযোগ ও উৎপাদন বাড়িয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, এবং তাদের কাজে লাগাতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগ কমে গেলে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা প্রবল।’