
প্রতিবেদক: ঢাকা মোটর শো ২০২৫-এ অংশ নিয়েছে বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ডগুলো। এবারের প্রদর্শনীতে মিতসুবিশি, হোন্ডা, এমজি, প্রোটন, চাংগান, সুজুকি, গ্যাক মোটরস, ডংফেন, দিপালসহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নতুন মডেলের গাড়ি প্রদর্শন করে। মেলায় দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি।
এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের মরিস গ্যারেজের (এমজি) ‘সাইবারস্টার’ মডেলের ইভি গাড়িটি সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে। ১ কোটি ২৫ লাখ টাকায় বাজারে আসা এই গাড়িটি একবার চার্জে চলে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এতে রয়েছে ৩৭৫ কিলোওয়াটের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। শূন্য থেকে ১০০ কিমি বেগে পৌঁছাতে লাগে মাত্র তিন সেকেন্ড। র্যানকন ব্রিটিশ মোটরস এ গাড়িটি দেশের বাজারে এনেছে এবং ইতোমধ্যে দুটি ইউনিট বিক্রিও হয়েছে।
এছাড়া, গাজীপুরে র্যানকনের তৈরি মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার মডেলের সাত আসনের গাড়িও ছিল প্রদর্শনীতে। এ গাড়ির দাম ৩৪ লাখ টাকা এবং এটি শহর ও দূরের পথ উভয়ের জন্যই উপযোগী।চীনা প্রতিষ্ঠান ডংজিন বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল এনেছে যার দাম ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে।
রাজধানীর বসুন্ধরায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে তিন দিনব্যাপী এ মোটর শোতে ১৭৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যার মধ্যে ৯টি গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং বাকিগুলো ছিল গাড়ি ও মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে জড়িত। আয়োজক প্রতিষ্ঠান সেমস গ্লোবালের এটি ছিল ১৮তম আয়োজন।
প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের চোখে পড়ে উত্তরা মোটরসের ‘সুজুকি জিমনি ৫-ডোর’ গাড়িটি। দুর্গম রাস্তায় চলার উপযোগী এ গাড়ির দাম ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া এসিআই মোটরস এনেছে ফোটন ব্র্যান্ডের ৩৬ লাখ টাকা মূল্যের ফ্রিজার ভ্যান, যা খাদ্য, ওষুধ বা কর্পোরেট পরিবহনে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এটি ২০% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে কিস্তিতেও কেনা যাবে।
আইইউটি’র ‘ফর্মুলা আইইউটি’ দল তাদের উদ্ভাবিত ফর্মুলা গাড়ি প্রদর্শন করে। গাড়িটি নিয়ে তাঁরা অংশ নেবেন চীনে আয়োজিত ‘ফর্মুলা স্টুডেন্টস চায়না ২০২৫’ প্রতিযোগিতায়। দলটির সদস্যরা জানান, তাঁরা চালকের নিরাপত্তা ও কারিগরি মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, যদিও বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, তবে বিক্রির পরিমাণ এখনও তুলনামূলক কম। প্লাগ-ইন হাইব্রিড ইঞ্জিনের গাড়িগুলোর চাহিদা বেশি, কারণ সেগুলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে চলতে পারে।
চীনা প্রতিষ্ঠান জিএসি তাদের ‘ই৯ পিএইচইভি’ মডেলের এমপিভি গাড়ি এনেছে। ১৩৬ কিলোমিটার একবার চার্জে চলা গাড়িটির দাম ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং এতে রয়েছে প্যানোরামিক সানরুফ, ডিজিটাল ককপিটসহ নানা আধুনিক ফিচার।
চাংগানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দিপাল এনেছে এলজিরোসেভেন ও এসজিরোসেভেন মডেলের পুরোপুরি বৈদ্যুতিক গাড়ি। প্রথমটি ৬০ লাখ ও দ্বিতীয়টি ৬৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একবার চার্জে যথাক্রমে ৫৪০ ও ৪৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে।
দিপালের দেশীয় বিক্রয়প্রধান আলফাত হোসাইন বলেন, সরকারের কর ও রেজিস্ট্রেশন ফি কমালে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি আরও বাড়বে। যারা আধুনিক প্রযুক্তি বুঝে, তারাই মূলত এসব গাড়ি কেনার প্রতি আগ্রহী।
প্রদর্শনীতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাগি কার, থ্রি হুইলার, ইভি ডেলিভারি ভ্যান, ট্রাইসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক যান প্রদর্শিত হয়। এসবের দাম দেড় লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে। একবার চার্জে সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের মধ্যে বাজাজ, স্পিডোজ, ডংজিন, সালিদা ছিল উল্লেখযোগ্য। অংশ নেওয়া মোটরসাইকেলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ছিল ইলেকট্রিক। চীনা প্রতিষ্ঠান সালিদা এনেছে ১২টি মডেলের ইভি বাইক যার দাম ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার মধ্যে। ডংজিন এনেছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার বৈদ্যুতিক বাইক।
ডংজিনের বিক্রয় নির্বাহী জাহিদ হাসান বলেন, “পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে ইলেকট্রিক যানবাহনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এবার মেলায় আমরা আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি।”
উত্তরা মোটরস এবারের মোটর শোতেই উদ্বোধন করেছে বাজাজ পালসার এফ২৫০ ডুয়েল চ্যানেল এবিএস মোটরসাইকেল। ২৫০ সিসির এই মোটরসাইকেলটির দাম ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এছাড়া আরসিবির স্টলে মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশ ঘিরে তরুণদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।