
প্রতিবেদক: মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি নিয়ে শুরুতে বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল, বাস্তবে তার প্রভাব এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে সীমিত। তবে এই সীমিত প্রভাবকে স্থায়ী ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে বলেছে, এখনই মনে করা উচিত নয় যে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব হবে না।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে আইএমএফ ২০২৫ সালের বৈশ্বিক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িয়েছে। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশার চেয়ে কম হারে শুল্ক আরোপ করায় এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ওয়াশিংটনের হিসাবে, সাম্প্রতিক বাণিজ্যচুক্তিগুলোর কারণে বেশির ভাগ দেশের জন্য শুল্কহার এপ্রিলের তুলনায় কমে ১০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
আইএমএফের নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে জুলাই মাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের সামান্য বেশি হলেও তা মহামারির আগের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭ শতাংশের নিচেই থাকবে। সংস্থাটির ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি চলতি বছর হতে পারে ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশ।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ার গুরিঞ্চাস ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে অধিকাংশ দেশ এখনো পাল্টা শুল্ক আরোপ থেকে বিরত রয়েছে। ব্যবসায়ীরাও সময় নষ্ট করেননি—শুল্কবৃদ্ধির আগে তারা আমদানি বৃদ্ধি করেছেন এবং সরবরাহব্যবস্থা নতুনভাবে সাজিয়েছেন।
গুরিঞ্চাস সতর্ক করেছেন যে বাণিজ্য–উত্তেজনা এখনো প্রশমিত হয়নি। এসব চুক্তি কত দিন টিকবে, তার নিশ্চয়তাও নেই। একই সঙ্গে শুল্কবৃদ্ধির বাড়তি খরচ শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাঁর মতে, অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, নীতিগত পরিবর্তনের পূর্ণ প্রভাব দৃশ্যমান হতে সময় লাগে।
চলতি বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র এমন এক অস্থির বাণিজ্য পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে কখনো শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে, কখনো তা স্থগিত রাখা হচ্ছে, আবার কখনো হঠাৎ নতুন চুক্তি করা হচ্ছে। এই ওঠানামার ফলে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।
এ সময়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–সম্পর্ক আবারও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে বিরোধের জেরে ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ১ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে চীনা পণ্যে শুল্ক আছে ৩০ শতাংশ। নতুন করে ১০০ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্কভার দাঁড়াবে ১৩০ শতাংশে।
গুরিঞ্চাস আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসননীতির কারণে দেশটির শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাঁর ভাষায়, শুল্কবৃদ্ধি ও শ্রম সংকট একসঙ্গে সরবরাহ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গুরিঞ্চাসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেলে তার প্রভাব শুধু দেশটিতে সীমাবদ্ধ থাকে না; এর অভিঘাত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জিডিপির প্রধান উৎস রপ্তানি, আর সেই রপ্তানির বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র।