
প্রতিবেদক: ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো বিনির্মাণ। অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন কিছু পরিবর্তন ও সংস্কার করতে চায়, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করা সম্ভব হয়। তবে বাজেট উপস্থাপনায় সেই প্রত্যাশিত কাঠামোগত রূপান্তরের স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। এই বিষয়ে সাবেক মহাপরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা কাঠামোগত সংস্কারের পথ দেখাবে—এমনটা অনেকেই আশা করেছিলেন। কিন্তু বাজেটের ঘোষণায় সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি।
তিনি বলেন, কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি ও কৌশলগত সংস্কার। তা রাতারাতি সম্ভব না হলেও অন্তত কিছু ক্ষেত্রে যদি এই সরকার রূপান্তরের সূচনা করত, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য একটা শক্ত ভিত্তি তৈরি হতো। বিশেষত, সমাজে যে বৈষম্য বাড়ছে—বিশেষ করে সুযোগ-ভিত্তিক বৈষম্য, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নারী অধিকারের ক্ষেত্রে—তা দূর করার প্রয়াস দেখা গেলে তা সমাজে মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারত।
মুস্তফা কে মুজেরীর মতে, কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনমানও উন্নত হতো। কিন্তু কর্মসংস্থানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিনিয়োগ—অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয়ই। বর্তমানে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ অনুকূল নয়। শুধু বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পথে যেসব বাধা রয়েছে, যেমন নীতিগত অনিশ্চয়তা, দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সেগুলো দূর না করা পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আসবে না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতিও দেশের অর্থনীতির বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে ক্রমাগত কমিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও বাস্তবে এর তেমন ফল পাওয়া যায়নি। কারণ, মুদ্রানীতির সঙ্গে রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বয় না হলে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা কঠিন। অথচ বাজেটে এই বিষয়ে কার্যকর কোনো দিকনির্দেশনা দেখা যায়নি।
সবশেষে মুস্তফা কে মুজেরী বলছেন, বাজেট প্রস্তাবে দেশের অর্থনীতির মূল সমস্যাগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রমাণ মেলে না। বৈষম্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি—এই চারটি জায়গায় যদি অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কিছুটা হলেও ইঙ্গিত দিত, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা যেত। কিন্তু সেই সুযোগটি হারানো হয়েছে।