
প্রতিবেদক: রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাসে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বিশেষ করে আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৩৫ শতাংশে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রতি মাসেই ঋণের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৩ শতাংশ। এরপর ধাপে ধাপে কমে জুনে ৬.৪৫ শতাংশ, জুলাইয়ে ৬.৫২ শতাংশ এবং আগস্টে আরও কমে ৬.৩৫ শতাংশে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট শেষে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র–জনতা অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। শুধু নতুন বিনিয়োগ নয়, চলমান অনেক কারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ফলে কর্মসংস্থানও স্থবির। এ পরিস্থিতিতে দেশের বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে। সরকারের পরিবর্তনের পর আর্থিক সংকটের কারণে এক-চতুর্থাংশ ব্যাংক ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে। অন্য ব্যাংকগুলোও ঋণের পরিবর্তে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে মনোযোগী হওয়ায় বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
বেসরকারি খাতকে চাঙা রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা—দুটি প্রধান দায়িত্বই বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়ে টাকার লাগাম টানায় ঋণের সুদহার বেড়ে ১৪–১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় চড়া সুদে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে আগ্রহ কমাচ্ছে। এছাড়া সুদহার বৃদ্ধির কারণে কিছু ভালো প্রতিষ্ঠানের ঋণও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ীদের অনেকের ব্যবসা সীমিত বা বন্ধ হয়ে গেছে। পর্ষদে পরিবর্তন হওয়া ১৪টি ব্যাংকের বেশ কয়েকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ বা সীমিত হয়ে গেছে। বর্তমানে পাঁচটি ব্যাংক গ্রাহকের জমা টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১,৩০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়মিত করার জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিশেষ উদ্যোগে নিয়মিত করা হয়েছে, যার সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের অনেকেরই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক চিত্র দেখা গেলেও বেসরকারি খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, “বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমার অনেক কারণ আছে। ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগ কমে। মূলত বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের আস্থা থাকতে হয়। অনিশ্চয়তা থাকলে তারা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবেন না। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই অনিশ্চয়তা কাটবে না।