ব্যাংকারদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ থমকে গেছে

প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাংকারদের জন্য একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ‘ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ’-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ‘ব্যাংকার্স ফাউন্ডেশন’ নামের একটি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয় এবং এতে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে আটটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা জমা দেয়। হাসপাতালটি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিচালক এবং তাঁদের পরিবারের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নির্মাণের কথা ছিল।

২০২২ সালের ১৬ জুন গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর নিবন্ধিত হয় ‘ব্যাংকার্স ফাউন্ডেশন’। ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে আরেকটি সভায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংকের জন্য ১০ কোটি এবং চতুর্থ প্রজন্ম ও পরবর্তীতে অনুমোদিত ব্যাংকের জন্য ৪ কোটি টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্য ছিল, সব মিলিয়ে ৫৩২ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা। চিঠির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে চাঁদা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং ফাউন্ডেশনের হিসাব খোলা হয় অগ্রণী ব্যাংকে।

তবে আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা ফাউন্ডেশনের তহবিল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের তিনজনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি থমকে যায়। জমি কেনার জন্য গুলশান ও ১০০ ফিট সড়কের আশপাশে খোঁজ নেওয়া হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বর্তমানে ফাউন্ডেশনের হিসাবে জমা থাকা ৬৮ কোটি টাকার মধ্যে সিটি ব্যাংক প্রথম এক লাখ টাকা দেয়। এরপর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক ১০ কোটি টাকা করে জমা দেয়। প্রিমিয়ার ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক জমা দেয় ৪ কোটি টাকা করে। তবে এর বাইরে আর কোনো ব্যাংক চাঁদা দেয়নি এবং হিসাব থেকে কোনো টাকা খরচ করা হয়নি।

সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় ধরনের সংস্কার শুরু হয় এবং নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে হাসপাতাল নির্মাণ পরিকল্পনা এখনো উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে ব্যাংকগুলো তাগাদা না পাওয়ায় চাঁদা দেওয়া থেকে বিরত থাকে। যদিও অনেক ব্যাংক এখনো এই উদ্যোগের পক্ষে রয়েছে।

অন্যদিকে, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, “এই উদ্যোগটি একরকম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং অনেক উদ্যোক্তা এর বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর মতে, হাসপাতাল নির্মাণ পরিকল্পনাটি বাস্তবসম্মত নয়, এবং যেসব ব্যাংক টাকা জমা দিয়েছে, তাদের তা ফেরত দেওয়া উচিত।”