
প্রতিবেদক: সরকার ব্যাংক কোম্পানি আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালে প্রবর্তিত ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ সংক্রান্ত বিধান অপসারণ এবং ব্যাংকের বোর্ড ছোট করার প্রস্তাব।
বর্তমান আইনে খেলাপিদের মধ্যে যারা ঋণ পরিশোধে অনিচ্ছুক, তাদের আলাদা তালিকাভুক্ত করে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই আলাদা শ্রেণিবিন্যাস বাদ দেওয়া হবে। কেবল খেলাপিদের একটি তালিকাই থাকবে, এবং যারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবেন, তারা আইনের আওতায় শাস্তি পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আলাদা তালিকা তৈরির ফলে শুধু কাজের চাপ বাড়ে না, দুর্নীতির সুযোগও তৈরি হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংশোধনীর খসড়া ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। এখন খসড়াটি পর্যালোচনা চলছে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এ বিষয়ে অধ্যাদেশ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় ব্যাংকের পরিচালকের সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ জন করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে পারেন, কিন্তু নতুন খসড়ায় বোর্ডের অর্ধেক, অর্থাৎ ৭ থেকে ৮ জন সদস্যকে স্বতন্ত্র পরিচালক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে যাচাইকৃত প্রার্থীদের তালিকা থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন করা হবে। কর্মকর্তাদের মতে, এতে ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং মুনাফালোভী শেয়ারহোল্ডারদের প্রভাব কমবে।
বিদ্যমান আইনে একই পরিবারের সর্বোচ্চ তিনজন সদস্য এবং আত্মীয়দের মনোনয়নে আরও দুজন পরিচালক থাকতে পারেন। নতুন খসড়ায় একটি পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজনকেই পরিচালক করার বিধান আনা হয়েছে। পাশাপাশি, ‘পরিবার’-এর সংজ্ঞায় শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে এ ধরনের নিয়োগ বন্ধ হয়।
বর্তমান আইনে পরিচালকের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১২ বছর হলেও খসড়ায় তা ৬ বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়িক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলেও অন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে পারে। নতুন সংশোধনীতে এই সুযোগ বন্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ, একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে ওই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও আর ঋণ নিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. নজরুল হুদা এসব প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মতে, ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ সংজ্ঞা দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করত, আর বোর্ড ছোট হলে কার্যকারিতা বাড়বে। তিনি আরও বলেন, পরিচালকের সংখ্যা নয়, বরং ব্যাংকার ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের মতো যোগ্য পেশাদারদের নিয়োগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।