
অনলাইন ডেক্স: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক অনিয়মের সহযোগী হিসেবে নাম এসেছে ডেপুটি গভর্নরসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে ব্যাংক খাত, যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই খাতের তদারকির দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর, এবং ১৫ বছরে তিনজন গভর্নরের বিরুদ্ধে অনিয়মের সহযোগী হওয়ার পাশাপাশি অবৈধ অর্থের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা অনিয়মে সহযোগিতা করে, পাশাপাশি সুবিধাভোগী ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত মঙ্গলবার সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে, এবং আদালত তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এছাড়া, সাবেক বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, এবং নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “বিগত সময়ে একটি চক্র গড়ে উঠেছিল, যার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া ও শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।”
এস কে সুর চৌধুরী ২০১২ সালে ডিজি হিসেবে নিয়োগ পান, এবং তাঁর সময়েই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রশান্ত কুমার হালদারের কাছে তুলে দেওয়া হয়, যা পরে লুটপাটের শিকার হয়। একইভাবে, ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের দখলও অনুমোদন দেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া, সাবেক বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া, ডিজি আবু ফরাহ মো. নাছেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ঋণ নীতিমালা শিথিল করে ব্যাংক খাতকে বিপর্যস্ত করার। এছাড়া, ডিজি খুরশীদ আলম ও কাজী ছাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারের পতনের পর এসব কর্মকর্তাদের পদ ছাড়তে হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যাঁরা অনিয়ম করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে এখন পর্যন্ত তদন্তের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) পরিচালক শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, “যেকোনো অনিয়মে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে, না হলে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে না।”
এখন, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতের সংস্কারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে দেখছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, এবং এটি এখন এক ধরনের ‘ক্রিশ্ণগহ্বর’ হয়ে গেছে। ব্যাংক খাতে রাষ্ট্রীয় সহায়তায় ব্যাংক দখলের ঘটনা ঘটেছে, এবং এতে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে।