
অনলাইন ডেক্স:দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি গত তিন মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ভালো ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধির পাশাপাশি নামে-বেনামে ঋণ বের হওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ায় এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.৬৩ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭.৪৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এ পরিমাণ ছিল ১৭.৩১ লাখ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের আগস্টে আমানত প্রবৃদ্ধি ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৭.০২ শতাংশে নেমে আসে। তবে সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। ওই মাসে আগের মাসের তুলনায় আমানত ১৪ হাজার ২০৮ কোটি টাকা বেড়ে প্রবৃদ্ধির হার হয় ৭.২৬ শতাংশ। এরপর অক্টোবরে তা বেড়ে হয় ৭.২৮ শতাংশ।
নভেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭.৬৩ লাখ কোটি টাকা। এ সময় আমানত প্রবৃদ্ধি ছিল আগের বছরের তুলনায় বেশি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে খাতটিতে আমানত বেড়েছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অন্তত ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, বেনামি ঋণ ঠেকানো এবং তারল্য সহায়তার মতো উদ্যোগে দুর্বল ব্যাংকগুলোর অবস্থা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।
ভালো ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২০২৪ সালে নতুন করে ৫ হাজার কোটি টাকা আমানত পেয়েছে। ব্যাংকটির সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমানত তুলে নেওয়ার চাপ কমেছে এবং ঋণের চাহিদাও কম থাকায় তারল্য পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। নভেম্বরে আগের মাসের তুলনায় ৩৫৪ কোটি টাকা কমে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ২.৭৭ লাখ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বাড়লে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। কারণ এতে টাকার হাতবদল কমে যায় এবং মানি ক্রিয়েশন বাধাগ্রস্ত হয়। তবে ব্যাংকে টাকা ফেরার ফলে তারল্য পরিস্থিতি উন্নত হয় এবং ঋণ প্রদানের সক্ষমতা বাড়ে, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ভালো ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ঋণের চাহিদা কমা, এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময়োপযোগী পদক্ষেপে দেশের ব্যাংকিং খাত ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। এর ফলে আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়ছে এবং অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।