
প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে চূড়ান্ত করতে পারেনি দেশের অধিকাংশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ৩০ এপ্রিল সময়সীমা থাকলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৩টির প্রতিবেদন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। একই অবস্থা তালিকাভুক্ত নয় এমন ২৫টি ব্যাংকের বড় অংশের।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবার বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে কোনো শিথিলতা না দেখিয়ে বাস্তব আর্থিক চিত্র প্রদর্শনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের বিপরীতে যথাযথ প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে এবং তার বিপরীতে বাড়তি প্রভিশন রাখতে হচ্ছে।
এছাড়া উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতেও এবার প্রভিশন রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আটকে থাকা আমানতের বিপরীতেও প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দেশনায় ব্যাংকগুলো চাপে পড়েছে।
গত ১৩ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালায় জানায়, যারা ডেফারেল সুবিধা নিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। এ অবস্থায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ বিধিনিষেধ থেকে ছাড় চেয়ে আবেদন করেছে। তবে গভর্নর দেশের বাইরে থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে যে, যারা সময়মতো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি, তাদেরকে আইন লঙ্ঘনের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে না।
বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে সরকারি ৯টি ও বিদেশি ৯টি। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেবল রূপালী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ৪৩টির মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬টি। তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে যেগুলো প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি, তাদের মধ্যে রয়েছে: ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, ওয়ান ব্যাংক, সাউথইস্ট, ইউসিবি, আল-আরাফাহ, স্ট্যান্ডার্ড, প্রিমিয়ার, এক্সিম, আইএফআইসি, এবি, ন্যাশনাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী এবং নতুন প্রজন্মের ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি ব্যাংক।
প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ১৩টি ব্যাংক, যাদের মধ্যে লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবারও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। তবে ব্র্যাক, সিটি, ইস্টার্ন, পূবালী, ডাচ্-বাংলা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ট্রাস্ট, শাহজালাল ইসলামী, যমুনা, প্রাইম, উত্তরা ও মিডল্যান্ড ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় যা বেড়েছে ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। হিসাব চূড়ান্ত করতে গিয়ে এ পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এর আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ব্যাপক খেলাপি ঋণের কারণে বহু ব্যাংক আগামীতে আর লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এ পরিস্থিতিতে আজ (রোববার) থেকে অফিসে যোগ দিচ্ছেন গভর্নর, এবং ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সময়সীমা এক মাস বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।