
অনলাইন ডেক্স: ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল বেড়েছে ১,৯২২ কোটি টাকা। ব্যাংকারদের মতে, নতুন করে ব্যাপক পরিমাণে খেলাপি ঋণ বাড়ায় পুনঃতফসিলের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ব্যাংকগুলো মোট ২০,৭৩২ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১৮,৮১০ কোটি টাকা। পুনঃতফসিল বাড়লেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.৮৫ লাখ কোটি টাকা, যা দেশের মোট ঋণের (১৬.৮৩ লাখ কোটি টাকা) ১৭ শতাংশ।
ব্যাংকারদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা সহজ করে ব্যাংকগুলোর ওপর পুরো প্রক্রিয়ার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়। একসময় পুনঃতফসিলের জন্য ১০-১২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রয়োজন হলেও, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এটি কমিয়ে ২-৪ শতাংশ নির্ধারণ করেন। এর ফলে পুনঃতফসিলের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসে সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল করেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো, যার পরিমাণ ১৭,৯৩৬ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ১,৬৫০ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১,১২০ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করেছে। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলো কোনো খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেনি।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ জানান, ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিক চাপে পড়েছেন। খরচ বাড়লেও আয় সেভাবে বাড়ছে না, ফলে অনেক ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যাংক ঋণ দেওয়ারও সক্ষমতা হারিয়েছে এবং তারাও সংকটে রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে হচ্ছে।
বর্তমান সরকার ব্যাংক খাতের লুকানো তথ্য উন্মোচনে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন মোসলেহ উদ্দীন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে যে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে পুনঃতফসিলের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।