
প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাত দিন দিন খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।
বর্তমানে ২২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের ওপরে, যার মধ্যে ৮টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৬০ শতাংশের বেশি।
৬০ শতাংশের ওপরে খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংকসমূহ- এর মধ্যে বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের খেলাপি ঋণ ৯৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক – ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ,ইউনিয়ন ব্যাংক – ৮৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ,পদ্মা ব্যাংক – ৮৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ,জনতা ব্যাংক – ৭২ শতাংশ,বেসিক ব্যাংক – ৬৮স দশমিক ৫৭ শতাংশ,বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক – ৬২দশমিক ৪৯ শতাংশ , ন্যাশনাল ব্যাংক – ৬০.দশমিক ৫০ শতাংশ ।
এর বাইরে ১৫টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক – ৪৩.৮৬% ,আইএফআইসি ব্যাংক – ৩৮.৪৯% ,অগ্রণী ব্যাংক – ৩৮.৪৬% ,সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক – ৩৪.৭৯% ,রূপালী ব্যাংক – ৩১.৭৩% ,গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক – ৩০.৮৬%,ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক – ২৯.৩৩% ,এবি ব্যাংক – ২৫.৯৯% ,ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ – ২১.০৮%
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত কিছু গ্রুপের নামে-বেনামে নেওয়া ঋণ এখন প্রকৃত চিত্রে প্রকাশ পাচ্ছে, যা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণও বেড়েছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপসহ বেশ কিছু বড় ব্যবসায়ীর অনিয়মিত ঋণ এখন খেলাপির তালিকায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সাল থেকে লভ্যাংশ বিতরণের ওপর বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে—১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না।শুধুমাত্র বিবেচ্য বছরের মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ দেওয়া যাবে; পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে নয়।ঋণ, বিনিয়োগ, বা সম্পদের কোনো ঘাটতি থাকলে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না।সিআরআর (CRR) ও এসএলআর (SLR) ঘাটতির কারণে কোনো দণ্ড সুদ বা জরিমানা বকেয়া থাকলে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, নতুন নীতিমালার বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ পরিদর্শন পরিচালনা করবে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
এর আগে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে ভয়াবহ ঋণখেলাপির মুখে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ির মধ্যেও রাজনৈতিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত গ্রুপ ও ব্যবসায়ীদের অনিয়মিত ঋণ এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি।