ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত

প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত সরকার নিট ৩৮,৫১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩,৫৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ ঋণ সরকার শেষ এক মাস ১০ দিনে গ্রহণ করেছে।

সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে । চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায় ১,৫৪৩ কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকায় নেমেছে।

সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশিত ঋণ না পাওয়া – গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ করেছিল, তার চেয়ে ২,২৪৪ কোটি টাকা বেশি ঋণের দায় শোধ করতে হয়েছে।বিদেশি উৎস থেকে ঋণছাড় কমে যাওয়া – আন্তর্জাতিক অর্থায়নে ঋণের প্রবাহ কম থাকায় সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৮৫,৬৬৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, তবে একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগের ঋণের ৪৭,১৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে মুদ্রাবাজার সংকোচিত হয়েছে।

তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৯,৪১০ কোটি টাকা নতুন মুদ্রা ছাপিয়ে ঋণ দিয়েছে, যা বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কিছুটা বাড়িয়েছে।

১০ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা।

বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণস্থিতি ৪ লাখ ৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা (জুন ২০২৩ শেষে ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা) ১ লাখ ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা (জুন ২০২৩ শেষে ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা)।

গত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গোপনে ‘ওভারড্রাফট’ খাতে ৪৮,৭৪৬ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছিল, যা বর্তমানে ৬,৭৪২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে, ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭.৪৭ শতাংশ হয়েছে। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় শোধ করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে ৯.৩৪ শতাংশে নামিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আশা করছেন, আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে।

সরকারের ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বাজেট লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণের পরিমাণ এখনও নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, ভবিষ্যতে রাজস্ব আয় বাড়ানো না গেলে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরতা আরও বাড়তে পারে।