ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীরা পাবেন দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা

প্রতিবেদক: বাংলাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হলে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা সুরক্ষা পাবেন। এতদিন এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল এক লাখ টাকা।

এই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করতে যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতোমধ্যে এর একটি খসড়া তৈরি করেছে এবং জনগণের মতামত চেয়েছে। মতামত পাঠানোর ঠিকানা ds.cb@fid.gov.bd, তবে এর জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ গঠন করবে, যা একটি স্বতন্ত্র হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। বর্তমানে ‘আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল’-এ যে অর্থ জমা হচ্ছে, তা প্রাথমিকভাবে এই নতুন তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং প্রতি তিন বছর পর এই পরিমাণ পর্যালোচনা করা হবে।

নতুন ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ‘আমানত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করবে, যা ব্যাংকের প্রচলিত রেগুলেটরি, সুপারভাইজরি ও রেজল্যুশন কার্যক্রম থেকে স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হবে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে ‘ডিপোজিট প্রোটেকশন ডিভিশন’ নামে একটি নতুন বিভাগও চালু করা হবে।

নতুন অধ্যাদেশে কিছু আমানতকে সুরক্ষা পরিকল্পনার বাইরে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের আমানত।স্বশাসিত সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আমানত।বিদেশি সরকার ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমানত  ও আন্তর্জাতিক সংস্থার আমানত।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি নির্ধারিত সময়ে আমানত বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ না করে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি তাদের চলতি হিসাব থেকে টাকা কেটে নিয়ে আমানত সুরক্ষা তহবিলে জমা করতে পারবে। বিলম্বিত প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে জরিমানাও আরোপ করা হবে।

নতুন তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে, যার চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এই পরিচালনা পর্ষদ প্রতি তিন বছর অন্তর একবার সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে।

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছেন, খসড়াটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং দুই লাখ টাকার সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এই পরিমাণ আরও বাড়ানো হতে পারে বলে আশাবাদী ব্যাংক কর্মকর্তারা।

কোনো আমানতকারীর যদি এক কোটি টাকা জমা থাকে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে তিনি কেবল দুই লাখ টাকা ফেরত পাবেন, বাকি অর্থ হারানোর ঝুঁকি থাকবে। সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, “বিশ্বব্যাপী এটাই প্রচলিত নিয়ম। নিরাপদ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে আমানতকারীদের উচিত ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা, সুশাসন, ঋণমান ও পরিচালনা পর্ষদের অবস্থা যাচাই করা।”

নতুন এই অধ্যাদেশ ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকদের সুরক্ষা আরও জোরদার করবে এবং আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।