
প্রতিবেদক: ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোনো পরিচালক বা সদস্য আলোচ্য কোনো বিষয়ের ওপর ভিন্নমত, পর্যবেক্ষণ বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলে, তা এখন থেকে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করতে হবে। একইভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব পর্যবেক্ষক বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদে উপস্থিত থাকেন, তাঁদের মতামত ও পর্যবেক্ষণও সভার কার্যবিবরণীতে সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতদিন বেশিরভাগ ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে কার কী ভূমিকা ছিল, তা কার্যবিবরণীতে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হতো না। বিশেষ করে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিযুক্ত পর্যবেক্ষকরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিতেন, সেগুলোর কোনো লিখিত প্রমাণ থাকত না। ফলে পরবর্তীকালে অনেক সময় সৎ পরিচালকেরা হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা থেকে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। নতুন নির্দেশনা কার্যকর হলে ভবিষ্যতে দায় নির্ধারণ ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ ও এর সহায়ক কমিটির সভায় উপস্থাপিত যেকোনো বিষয় নিয়ে পরিচালকদের মতামত, প্রশ্ন, ভিন্নমত বা পর্যবেক্ষণ যদি থাকে, তা সভার কার্যবিবরণীতে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটি আগেও একটি নির্দেশনা হিসেবে ছিল, তবে বেশিরভাগ ব্যাংক তা মানতো না। এখন এটি বাধ্যতামূলক করা হলো। সভায় আলোচিত এজেন্ডা এবং পরিচালকদের আলোচনার মূল বিষয়, সুপারিশ ও মন্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, কোনো ব্যাংকে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকেন এবং কোনো আলোচ্য বিষয়ের ওপর মতামত দেন, তা–ও সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করতে হবে। ফলে ব্যাংকের পর্ষদ সভার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত এক দশকে ব্যাংকিং খাতে যেসব বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে কেউ কোনো দ্বিমত প্রকাশ করেননি। ফলে পরবর্তীতে তদন্তের সময় পর্ষদের সবাইকে একই দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এখন থেকে কার্যবিবরণীতে ব্যক্তিগত মতামত ও অবস্থান সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ হলে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ সহজ হবে এবং সৎ পরিচালকেরা তাঁদের ভূমিকা পালনে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন।