
অনলাইন ডেক্স: বাংলাদেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) দুরবস্থা কাটছে না। উপরন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বহুল আলোচিত আর্থিক খাতের ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আর্থিক অনিয়মের প্রভাব এখনো পুরো খাতে রয়ে গেছে। পি কে হালদারের মালিকানাধীন এবং ব্যবস্থাপনায় থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেই খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৬,১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৫২ শতাংশ। এর আগে, জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২৪,৭১১ কোটি টাকা (৩৩.১৫ শতাংশ)। অর্থাৎ, মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১,৪৫২ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১,৫৬৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৯.২৭ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এনবিএফআইয়ের তুলনায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার আরও বেশি হারে বাড়ছে। ব্যাংকগুলোর “লুকানো খেলাপি ঋণ” সম্প্রতি উন্মোচিত হওয়ায় এ হার সামনে আসছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকগুলোর তদারকি কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে।
অন্যদিকে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত কয়েক বছর ধরেই কঠোর তদারকির কারণে তাদের প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রকাশ করে আসছে।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্থিরতা এখনো কাটেনি। কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট প্রকট হওয়ায় এনবিএফআইগুলোও চাপের মুখে পড়েছে।
কিছু ব্যাংক যখন গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তখন সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গ্রাহকেরা তাদের আমানত তুলে নেন। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে আমানত ও ঋণ দুই-ই হ্রাস পায়, যা তাদের সার্বিক কার্যক্রমকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তদারকি ও সংস্কার কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন। ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলোর জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। জুনে আমানত আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকায়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে আবার আমানত কমেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, তহবিল-সংকটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সেভাবে ঋণ বাড়ছে না। গত বছরের জুন শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে আরও কমে হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পি কে হালদার-সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এফএএস ফিন্যান্সে খেলাপি ঋণ ৯৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফিন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ৮৭২ কোটি টাকা। ৯৭ শতাংশ ঋণ খেলাপি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ও পিপলস লিজিংয়ের। এ ছাড়া ৯০ শতাংশের কম-বেশি খেলাপি ঋণ ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফার্স্ট ফিন্যান্স, আভিভা ফিন্যান্সসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
দেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো আইপিডিসি ফিন্যান্স, যেটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে। বর্তমানে দেশে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে।