
প্রতিবেদক: ভারত এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ইরানসহ উপসাগরীয় দেশগুলো এবং কিছু ট্রানশিপমেন্ট (জাহাজ পরিবর্তন) কেন্দ্রের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য—পাকিস্তান থেকে কোনো পণ্য যেন পরোক্ষভাবে ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে না পারে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এসব দেশের পণ্যের লেবেল ও উৎপত্তি ভালোভাবে যাচাই করা হচ্ছে। এর আগে ভারত ইউএইকে অভিযোগ করে জানিয়েছিল, পাকিস্তানের খেজুর ইউএইয়ের নাম ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এটি ইউএইর সঙ্গে সেপা চুক্তির অপব্যবহার।
কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তান থেকে সরাসরি এবং তৃতীয় দেশের মাধ্যমে সব ধরনের পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত ও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করেছে।
ভারতের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইউএইসহ বিভিন্ন ট্রানশিপমেন্ট হাব থেকে আসা পণ্যগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে—এর কোনো উপাদান বা অংশ পাকিস্তান থেকে এসেছে কি না। “রুলস অব অরিজিন” বা উৎপত্তি বিধি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কোনো পণ্যের উৎপত্তি কোন দেশে, তা নির্ধারণ করে শুল্ক ছাড় বা অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত আরব আমিরাতে রপ্তানি করেছে ৩৬.৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং আমদানি করেছে ৬৩.৪২ বিলিয়নের পণ্য। একই সময়ে ভারত খেজুর আমদানি করেছে ২৭০.৪ মিলিয়ন ডলারের, যার মধ্যে ১২৩.৮২ মিলিয়ন ডলারের খেজুর এসেছে ইউএই থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট খেজুর আমদানি ছিল ২৭৭.২৫ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, একই অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাকিস্তান থেকে ইউএইতে রপ্তানি বেড়েছে ২৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ১.২ বিলিয়ন ডলার। ফলে ভারতের আশঙ্কা—পাকিস্তানি পণ্য ইউএই হয়ে ঘুরে ভারতে প্রবেশ করছে।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় ২ মে এক নির্দেশনায় জানায়, পাকিস্তানে উৎপাদিত বা সেখান থেকে রপ্তানি হওয়া সব ধরনের পণ্য, তা সরাসরি হোক বা অন্য দেশের মাধ্যমে, ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষার জন্য নেওয়া পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে। তবে সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যতিক্রম সম্ভব নয়।
কিন্তু বাস্তবে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে ভারতকে। যদি কোনো পণ্য সম্পূর্ণভাবে একটি দেশে তৈরি হয়, তাহলে তার উৎস নির্ধারণ সহজ হয়। সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন সেই পণ্যে অন্য কোনো দেশে ‘মূল্য সংযোজন’ (value addition) করা হয়। ফলে তখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে হয়—আসল উৎপত্তি কোথায়। এক কর্মকর্তা বলেন, এমনকি ট্রানজিটে থাকা পণ্যগুলোও এখন নজরদারির আওতায় আছে। কিন্তু সরকার যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাতে ট্রানজিট পণ্য এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে কি না—তা স্পষ্ট নয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ভারত পাকিস্তান থেকে ২.৮৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার মধ্যে গাছপালা, বীজ, খেজুর, ডুমুর ও মল্টের নির্যাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য অনেক আগেই হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারত পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।
তথ্যসূত্র অনুযায়ী, ভারত ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে এমএফএন বা সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের স্বীকৃতি দেয়। তবে পাকিস্তান কখনোই ভারতকে সেই স্বীকৃতি দেয়নি।