
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত একটি বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি খুব শিগগিরই হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে কর ও ব্যয় হ্রাস আইনের প্রচারণা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে খুব বড় একটি চুক্তির দিকে এগোচ্ছি, যাতে তাদের বাজার খুলে দেওয়া হবে।
ট্রাম্প আরও জানান, চীনের সঙ্গে এরই মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে এবং সেখানেও মার্কিন বাজারের প্রবেশাধিকার বাড়বে। তিনি বলেন, “আমরা এখন প্রতিটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করছি। কেউ কেউ আছে, যাদের চিঠি পাঠিয়ে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে জানানো হচ্ছে, যে তাদের ওপর ২৫%, ৩৫% বা ৪৫% শুল্ক বসানো হতে পারে।”
ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিনিধি রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল যখন ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন, ঠিক তখনই ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে চলমান আলোচনায় তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ২ এপ্রিল থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে এসব শুল্ক ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই চুক্তি সম্পন্ন করতে চায় ভারত, যাতে করে শুল্কের প্রভাব এড়ানো যায়। সে লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটেও মার্কিন পণ্যে শুল্ক হ্রাস করেছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দাবি কৃষিপণ্য, দুগ্ধজাত পণ্য, ইলেকট্রিক গাড়ি, পানীয়, পেট্রোকেমিক্যাল এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত (জিএমও) ফসলে শুল্ক হ্রাস। অন্যদিকে ভারত চায় পোশাক, চামড়া, গয়না, প্লাস্টিক, রাসায়নিক, চিংড়ি, তেলবীজ, আঙুর ও কলায় মার্কিন শুল্ক কমানো হোক।
তবে ভারতের জন্য সবচেয়ে কঠিন অংশ হচ্ছে দুগ্ধ ও কৃষিখাতের বাজার উন্মুক্ত করা, যেটি এখন পর্যন্ত কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতেই ভারত করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, দুই দেশ এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখান থেকে প্রথম ধাপের চুক্তি স্বাক্ষর করতে আর বেশি সময় লাগবে না। তাঁর মতে, উভয়পক্ষই আলোচনায় দক্ষ প্রতিনিধিকে নিয়োগ করেছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই এই চুক্তির প্রথম ধাপ চূড়ান্ত করতে চায় দুই দেশ। লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমান ১৯১ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়নে উন্নীত করা।
এই প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে সতর্ক করেছে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)। সংস্থাটি বলেছে, কোনো চুক্তিই যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত বা একতরফা না হয়। চুক্তিতে কৃষক, দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামো ও নীতিনির্ধারণের সার্বভৌমত্ব যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
জিটিআরআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “সম্ভবত সীমিত পরিসরের একটি চুক্তি হবে, যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্প্রতি হয়েছে। কিন্তু ভারতকে সাবধান থাকতে হবে যাতে এতে দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হয়।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে চুক্তির ভারসাম্য ও দেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলছে বিশ্লেষকরা।