
প্রতিবেদক:বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। তৈরি পোশাকের বাইরের পণ্যে বৈচিত্র্য আসায় এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে ভারত স্থলপথে বেশ কিছু পণ্যের আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় ভবিষ্যতে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ভারতে মোট ১৮১ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের ১৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ রপ্তানি পরিমাণ।
বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোশাক হলেও ভারতের বাজারে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্যের অংশ ছিল বেশি। গত অর্থবছরে ভারতে মোট রপ্তানির ৩৬ শতাংশ ছিল তৈরি পোশাক এবং বাকি ৬৪ শতাংশ ছিল খাদ্যপণ্য, জুতা, পাটজাত পণ্য, ধানের কুঁড়ার তেল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, মাছ, প্লাস্টিকের কাঁচামাল, ব্যাগ, মরিচারোধী ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের স্ক্র্যাপসহ ১,০৪৭ ধরনের পণ্য।
বাংলাদেশ তিনটি পথ—স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথ—ব্যবহার করে ভারতে পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে স্থলপথই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৮ শতাংশ (৮৭ কোটি ডলার)। সব মিলিয়ে স্থলপথে মোট রপ্তানি হয়েছে ৭৮ শতাংশ, বাকি ২২ শতাংশ গেছে সমুদ্র ও আকাশপথে।
তবে এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ছেদ পড়তে শুরু করেছে ভারতীয় বিধিনিষেধের কারণে। গত ১৭ মে প্রথম দফায় ভারত তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, আসবাবপত্র, সুতা ও কোমল পানীয়সহ কয়েকটি পণ্য স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। শুধু কলকাতা ও নভোসেবা বন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য আমদানি অনুমোদন দেওয়া হয়। খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ভোমরা স্থলবন্দর ও সমুদ্রপথ খোলা রাখা হয়।
পরবর্তী দফায় ২৭ জুন আরও ৯ ধরনের পণ্য—যেমন কাঁচা পাট, পাটের সুতা, লিনেন কাপড়, ফ্লাক্স সুতা ইত্যাদি—স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে জুন মাসে ভারতের বাজারে রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। ওই মাসে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ডলারের পণ্য, যেখানে আগের বছরের জুনে রপ্তানি হয়েছিল সাড়ে ১২ কোটি ডলারের পণ্য।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, স্থলপথে দ্রুত ও তুলনামূলক কম খরচে পণ্য পাঠানো যেত, যা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাজার তৈরিতে সহায়ক হয়েছিল। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানও রপ্তানিতে যুক্ত হয়েছিল। তবে বিধিনিষেধের কারণে এখন তৈরি পোশাক পুরোপুরি সমুদ্রপথে রপ্তানি হচ্ছে, যা সময় ও খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘খাদ্যপণ্য এখন শুধু ভোমরা স্থলবন্দর ও সমুদ্রপথে রপ্তানি করা যাচ্ছে। এতে সময় ও খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি প্রতিটি চালান পরীক্ষা করা হচ্ছে, যার ফলে সময় আরও বেশি লাগছে।’ তিনি সতর্ক করেন, এই বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকলে ভারতীয় বাজারে রপ্তানি কমে যেতে পারে। সরকারের প্রতি তিনি বাণিজ্যের বাধাগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।