
প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা, যা আগের নির্বাচনী বছরের তুলনায় অনেক কম। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেবার বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রস্তাবিত বাজেটে আগের চেয়ে ১ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩–২৪ অর্থবছরে ইসির জন্য মূলত বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। তবে নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে তা পরে বাড়ানো হয়েছিল। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২২৯ কোটি টাকা। ইসি কর্মকর্তারা মনে করছেন, যদি আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হয়, তাহলে বাজেট সংশোধন করে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় করা হবে। তবে প্রয়োজন হলে সরকার অতিরিক্ত অর্থ দেবে। তার ভাষায়, “বাজেট একটা প্রস্তাব। যদি নির্বাচন পরিচালনার জন্য আরও তহবিলের প্রয়োজন হয়, তাহলে হবে। আবার যদি খরচ কম হয়, তবে বাড়তি অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।”
সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।” তিনি আরও বলেন, “গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছি এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও আদেশ সংশোধনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।”
নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল মোট ১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা, যা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণ। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন, এবং সেবার ব্যয় হয়েছিল মাত্র ২৮২ কোটি টাকা।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন আয়োজনের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে হলে নির্বাচন কমিশনের জন্য বর্তমান বরাদ্দ পর্যাপ্ত না-ও হতে পারে, এবং বাজেট সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা সামনে আসতে পারে।