মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় তেলের দাম চড়া, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক

প্রতিবেদক: সোমবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে সূচকের কিছুটা পতন লক্ষ্য করা গেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে পাঁচ মাসের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে যে, তেহরান পাল্টা জবাব দেবে কি না। এই উত্তেজনার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতির ওপর পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল রোববার পশ্চিমা বিশ্বের শেয়ারবাজারে ছুটি থাকায় তাৎক্ষণিক কোনো বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যদিও নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে ডলারের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কজনিত বড় কোনো সাড়া দেখা যায়নি। দিনের শুরুতে তেলের দাম প্রায় ২.৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেলেও পরে তা কিছুটা কমে আসে।

বিশ্লেষকদের মতে, আশাবাদীরা ধারণা করছিলেন ইরান হয়তো পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবে বা সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনাও থাকবে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, অতীতে মধ্যপ্রাচ্যে সরকার পরিবর্তনের সময় তেলের দাম হঠাৎ ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে গড়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে কৌশলগত গুরুত্ব পাচ্ছে হরমুজ প্রণালি, যেখানে দিয়ে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ তেল এবং ২০ শতাংশ তরল গ্যাস পরিবাহিত হয়।

কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার পণ্য বিশ্লেষক বিবেক ধর বলেছেন, হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ না করে কৌশলগতভাবে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি করাই ইরানের জন্য বেশি যৌক্তিক, কারণ প্রণালি বন্ধ হলে ইরানও তেল রপ্তানি করতে পারবে না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি ইরান এই প্রণালিতে বাধা দেয়, তাহলে ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।

সোমবার ব্রেন্ট তেলের দাম ২.৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯.১২ ডলার, আর যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম ২.৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫.৯৮ ডলার। অপরদিকে, সোনার দাম সামান্য ০.১ শতাংশ কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স ৩,৩৬৩ ডলারে।

এদিন শেয়ারবাজার বন্ধ থাকায় মূলত ফিউচার্স লেনদেন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্স ০.৫ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচার্স ০.৬ শতাংশ কমেছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে জাপান বাদে এমএসসিআই সূচক ০.৫ শতাংশ ও জাপানের নিক্কি ০.৯ শতাংশ কমেছে।

ইউরোপীয় বাজারগুলোতেও পতনের ধারা দেখা গেছে। ইউরোস্টক্স ৫০-এর ফিউচার ০.৭ শতাংশ, এফটিএসই ফিউচার ০.৫ শতাংশ এবং ডিএএক্স ফিউচার ০.৭ শতাংশ কমেছে। উল্লেখ্য, ইউরোপ ও জাপান আমদানি নির্ভর হলেও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ।

মুদ্রাবাজারেও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। সাধারণত সংকটকালে ডলার ও সোনার চাহিদা বাড়ে। এবারও ডলার কিছুটা শক্তিশালী হলেও খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান ০.৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪৬.৪৮ ইয়েন, আর ইউরোর বিপরীতে ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.১৪৮১ ডলারে। ডলার ইনডেক্স বেড়ে হয়েছে ৯৯.০৭৮।

যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ২ ভিত্তি পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৪.৩৯৭ শতাংশ। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বন্ডে বড় কোনো ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি।

ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা নিয়েও ধোঁয়াশা চলছে। জুলাই মাসের বৈঠকে সুদহার কমার সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীরা খুব একটা দেখছেন না। যদিও ফেড গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার এই মাসেই সুদহার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলসহ অধিকাংশ কর্মকর্তা এখনো সুদের বিষয়ে সতর্ক।

এ সপ্তাহে অন্তত ১৫ জন ফেড কর্মকর্তা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন এবং চেয়ারম্যান পাওয়েল মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে অংশ নেবেন। সেখানে ইরান পরিস্থিতি ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য নতুন শুল্কনীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এ ছাড়া ন্যাটো নেতাদের হেগে অনুষ্ঠেয় বৈঠকেও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ও প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে আলোচনা হবে। অর্থনৈতিকভাবে এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি, বেকার ভাতার আবেদন এবং বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদন পরিস্থিতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের কথা রয়েছে।