
প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যার ৭১ শতাংশই মাত্র ১০টি ব্যাংকে। এর মধ্যে রয়েছে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক।
সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। মার্চ পর্যন্ত তাদের বিতরণ করা ৯৪ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ৭০ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে—যা ৯ মাসে ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশাল এই অঙ্কের মূল কারণ হিসাবে ক্রিসেন্ট, বেক্সিমকো, থার্মেক্স, এস আলম ও অ্যানটেক্স গ্রুপের আর্থিক কেলেঙ্কারিকে দায়ী করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, যার খেলাপি ঋণ ৪৭ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৭.৩৮ শতাংশ। ব্যাংকটি দীর্ঘদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যারা ব্যাংকটির অর্ধেকের বেশি ঋণ গ্রহণ করেছে। গত বছরের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ কয়েক মাসেই এটি প্রায় সাত গুণ বেড়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৪১.৩৫ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৯ হাজার ৯১ কোটি টাকা (২১.১১%) এবং রূপালী ব্যাংকের ১৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা (৩৬%)।
বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক, যেটি দেশের প্রথম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, সেখানে খেলাপির হার ৬৪ শতাংশ। ৯ মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়ে ২৭ হাজার ৩৫২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক খেলাপি ঋণ ২২,৬৪৬ কোটি টাকা (৩৬.৬৩%)।সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১৪,৩৬০ কোটি টাকা (৩৮%)।ইউনিয়ন ব্যাংক ২৫,৩০৩ কোটি টাকা (প্রায় ৯০%)।আইএফআইসি ব্যাংক ২৫,৯৭১ কোটি টাকা, যেখানে জুনে ছিল মাত্র ৩,৭৫৬ কোটি টাকা
আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ব্যাংকটিকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছেন।
ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এস আলম গ্রুপসহ বড় ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনে ৩৭০টি এবং অর্থঋণ আদালতে ২৪টি মামলা করা হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক অনিয়মের প্রতিফলনই আজকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ। প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতেই খেলাপির হিসাব এখন বেড়েছে।”
অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম মনে করেন, “ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির আওতায় না আনলে অনেকে উৎসাহিত হবে। খেলাপি সংস্কৃতি বন্ধ না হলে ব্যাংক খাত আর্থিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।”