
প্রতিবেদক: প্রতিবছর মালয়েশিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের হালাল খাদ্য আমদানি হয়। ২০৩০ সালে এ বাজারের আকার দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া গেলে বাংলাদেশ এ বাজারে বছরে ৭০০–৮০০ কোটি ডলারের হালাল পণ্য রপ্তানি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) সভাপতি সাব্বির আহমেদ খান।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। চলতি মাসে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বিএমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আনোয়ার শহীদ, সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন খান এবং প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ এম ওমর তৈয়ব উপস্থিত ছিলেন।
সাব্বির আহমেদ খান বলেন, ২০২৫ সালের শেষে মালয়েশিয়ার সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বাজারের আকার দাঁড়াবে ১৯ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে ৬০ হাজার দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাবে মাত্র ১৫ হাজার। বাকি ৪৫ হাজার জনশক্তি আসবে ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চুক্তির মাধ্যমে অন্তত ২ হাজার ৫০০ জন দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়া এখনো সেমিকন্ডাক্টর খাতে চিপ ডিজাইন, আর্কিটেকচার ও প্রোটোটাইপিংয়ের মতো সেবার জন্য তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এ খাতে অবদান রাখতে সক্ষম। সঠিক কৌশল নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর সেবা রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উন্নীত করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ সম্মেলনে বিএমসিসিআই তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
মালয়েশিয়ার জাতীয় অ্যাপ্লাইড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (এমআইএমওএস) সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা।
অ্যাডভান্সড সেমিকন্ডাক্টর একাডেমির (এসইএম) সঙ্গে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিটিটি) কর্মসূচি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ।
প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট (পিবিআইএল) ও আন্তর্জাতিক শরিয়া পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান আমানি অ্যাডভাইজারের মধ্যে ইসলামি বিনিয়োগ খাত ও সুকুক কাঠামো উন্নয়ন সহযোগিতা।
বিএমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আনোয়ার শহীদ বলেন, তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। মালয়েশিয়ায় শুধু হালাল খাদ্য নয়, হালাল হোটেল ও পর্যটন খাতেও বাংলাদেশের বড় সুযোগ রয়েছে।
প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের এমডি সৈয়দ এম ওমর তৈয়ব বলেন, মালয়েশিয়ার সুকুকের বাজার বর্তমানে ২০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মোট আমানতের ২৫ শতাংশ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে রয়েছে। আমানি অ্যাডভাইজরের সঙ্গে চুক্তি দেশের শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সুকুক বাজারকে আরও এগিয়ে নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে এখনো বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হলেও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি ডলারের পণ্য।