
প্রতিবেদক: দেশের কৃষিজমির মধ্যে খুলনা বিভাগের জমি সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এই বিভাগের ৫৬.৩৬ শতাংশ কৃষিজমিতে চাষাবাদ টানা তিন বছর লাভজনক ছিল। এর পরই অবস্থান করছে বরিশাল ও রংপুর বিভাগ। আর সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট বিভাগ। জাতীয় পর্যায়ে মোট কৃষিজমির ৪৪.৭৬ শতাংশই লাভজনক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘উৎপাদনশীল ও টেকসই কৃষি জরিপ ২০২৫’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য জরিপটি করা হয়। সারা দেশের মোট ১৫,৬০০টি খানা এবং ৭২২টি প্রাতিষ্ঠানিক খামার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের টানা তিন বছর যেসব জমি লাভজনক ছিল, সেগুলোকে প্রত্যাশিত লাভজনক কৃষিজমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক বা দুই বছর লাভজনক জমি গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। প্রত্যাশিত ও গ্রহণযোগ্য লাভের মিলেই টেকসই কৃষিজমির হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব এলাকায় কৃষক নতুন প্রযুক্তি ও চাষাবাদের পদ্ধতি দ্রুত রপ্ত করতে পারেন, সেসব জমির ফলন ভালো হয়। টানা কয়েক বছর লাভজনক চাষাবাদ কৃষকের আগ্রহ বাড়ায় এবং সেই সঙ্গে লাভজনক জমির পরিমাণও বাড়ে।
বিবিএসের উপপরিচালক ও জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, খুলনা ও বরিশাল এলাকায় মিশ্র চাষ, অর্থাৎ মাছের পাশাপাশি সবজি চাষের প্রচলন বেশি হওয়ায় আয়ও বেশি। উত্তরাঞ্চলে শস্যচাষ হলেও মিশ্র চাষাবাদ কম হওয়ায় সেখানে লাভজনক জমির হার কম।
বিভাগীয় পর্যায়ে খুলনার পর বরিশাল বিভাগের কৃষিজমি ৪৯ শতাংশ টানা তিন বছর লাভজনক ছিল। এরপর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৬ শতাংশ কৃষিজমি লাভজনক ছিল। অন্যদিকে সিলেটের লাভজনক কৃষিজমি মাত্র ২২ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. আবদুল মুঈদ বলেন, সিলেটে হাওরের কিছু এলাকা ছয় মাস পানির নিচে থাকে, অন্য জায়গায় সেচের অভাবে বোরো ও আমন মৌসুম ছাড়া ফসল হয় না। অনেক জমির মালিক বিদেশে থাকায় যথাযথ ব্যবস্থাপনা নেই, যার কারণে লাভজনকতা কম।
জাতীয় পর্যায়ে মোট কৃষিজমির মধ্যে প্রতি হেক্টর ভিত্তিতে ৪৪.৩৭ শতাংশ জমিকে টেকসই হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি টেকসই কৃষিজমি রাজশাহী (৫১%) এবং ময়মনসিংহ (৫০%)। সিলেট এই তালিকায় সর্বনিম্ন, মাত্র ২৫ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, যেখানে প্রতি হেক্টর ১০০ মণ ফসল হওয়ার কথা, সেখানে এক-তৃতীয়াংশের কম ফসল হলে সেই জমি টেকসই নয়। কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সার ও কীটনাশকের ব্যবহারও বাড়ছে। তবে কৃষিজমির প্রায় অর্ধেকে টেকসইভাবে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না।
মজুরি ক্ষেত্রে ময়মনসিংহে ৭৫ শতাংশ কৃষক জাতীয় কৃষি মজুরি হারের সমান বা বেশি মজুরি পান। দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম। সবচেয়ে পিছিয়ে সিলেট।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “জরিপে দেখা গেছে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে উৎপাদনশীলতা বেশি, কিন্তু লাভজনকতা সবচেয়ে বেশি নয়। খুলনা ও বরিশালের কৃষি লাভজনক হলেও উৎপাদন নিবিড়তায় শীর্ষে নয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে উৎপাদন নিবিড়তা বাড়াতে হবে। যেখানে উৎপাদন কম, যেমন সিলেট, সেখানে আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে।”