মুনাফা না হলেও কর দিতে বাধ্য উদ্যোক্তারা, ন্যূনতম কর ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ

প্রতিবেদক: বর্তমান আয়কর আইনের আওতায় বার্ষিক টার্নওভারের ভিত্তিতে ন্যূনতম কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক হওয়ায়, প্রকৃত মুনাফা না করেও অনেক কোম্পানিকে কর দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিকে অন্যায্য মনে করছেন উদ্যোক্তারা। তাদের অভিযোগ, ন্যূনতম কর (মিনিমাম ট্যাক্স) হিসেবে আদায় করা অগ্রিম কর মুনাফার তুলনায় বেশি হলে, সেটি ভবিষ্যৎ করের সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ নেই। ফলে লোকসানেও কর দিতে বাধ্য হওয়া ব্যবসায়ীদের কাছে এ করনীতি একপ্রকার ‘শাস্তি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক টার্নওভারের ওপর ০.৬ শতাংশ হারে কর দিতে হয়—মুনাফা হোক বা না হোক। পাশাপাশি রপ্তানির ওপর ১ শতাংশ হারে উৎসে কর আদায় করা হয়, যারও কোনো সমন্বয়যোগ্যতা নেই। এমন বাস্তবতায়, প্রকৃত কর হিসাব শেষে দেখা গেলেও করদাতারা অতিরিক্ত পরিশোধিত কর ফেরত পাচ্ছেন না। উদাহরণস্বরূপ, ১ কোটি টাকা অগ্রিম কর দিলে যদি চূড়ান্ত কর দাঁড়ায় ২০ লাখ, তাহলে বাকি ৮০ লাখ টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো ব্যবস্থাও নেই।

বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলীহুসাইন বলেন, ‘অগ্রিম কর ফাইনাল সেটেলমেন্ট হলেও তা সমন্বয়ের সুযোগ না থাকায় কোম্পানির ব্যালান্স শিটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে গেলে গোটা অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশে ন্যূনতম কর ব্যবস্থা থাকলেও তা পরবর্তী সময়ে সমন্বয়যোগ্য হয়, কিন্তু বাংলাদেশে সেটি নেই।’

এমন করনীতিকে শিল্প-বান্ধব নয় উল্লেখ করে টিকে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার বলেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন লোকসানে বা কম মুনাফায় চলছে। তার ওপর কার্যকর কর দাঁড়াচ্ছে মুনাফার তুলনায় বেশি। এমন নীতি ব্যবসা পরিবেশকে উৎসাহিত করে না।’

জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম মনে করেন, ন্যূনতম কর ব্যবস্থায় স্থানীয় শিল্প ও বিদেশি বিনিয়োগ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি সময়োপযোগী কর সংস্কারের আহ্বান জানান।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, ‘ব্যবসা না চললেও শুধুমাত্র টার্নওভারের ভিত্তিতে কর দিতে বাধ্য হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যকর মূলধন সংকটে পড়ছে।’ তার মতে, এনবিআরকে বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে এবং অগ্রিম কর ও ভ্যাট প্রত্যাহারে উদ্যোগ নিতে হবে।

অন্যদিকে এনবিআরের এক সদস্য (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, দেশে অনেক কোম্পানি মুনাফা হলেও লোকসান দেখায়, তাই কমপ্লায়েন্স ঘাটতির কারণেই এমন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সরকারের ওপর টার্নওভার কর বৃদ্ধির চাপ দিচ্ছে। তবে আসন্ন বাজেটে ন্যূনতম কর প্রত্যাহার বা রিফান্ড ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগের পরিবেশ ইতোমধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে। তার ওপর ন্যূনতম করের এই বাধ্যবাধকতা উদ্যোক্তাদের জোর করে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই বাস্তবতায় ন্যূনতম কর ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনার দাবি ক্রমশ জোরাল হচ্ছে।