মূল্যস্ফীতি কমলেও সুদহার কমছে না, নতুন মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগে গতি না আসার আশঙ্কা

প্রতিবেদক: নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এবারও মুদ্রানীতির মূল অগ্রাধিকার থাকছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। গত জুনে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

ব্যবসায়ীরা সুদহার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানালেও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো রেট ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৯ শতাংশ, যদিও গত অর্থবছরের শেষ নাগাদ এ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ২০ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, শুধুমাত্র নীতি সুদহার কমালে বিনিয়োগ বাড়বে না। বরং মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। তার মতে, বিনিয়োগে গতি আনতে জ্বালানি ও গ্যাস সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে যেসব স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়, তার ওপর ১০ শতাংশ রেপো সুদহার বহাল থাকছে। স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (SLF) ১১.৫০ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (SDF) কিছুটা কমিয়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি হ্রাসের পেছনে ডলারের দর স্থিতিশীল হওয়া এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৭২ বিলিয়ন ডলারে।

আগামী ছয় মাসের মুদ্রানীতিতে মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে, যা এর আগে ছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। মে পর্যন্ত এ হার ছিল ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনা ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ধার দেওয়ার ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহও বেড়েছে।

সব মিলিয়ে এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।