মূল্যস্ফীতি ৯% ছাড়ালেও কমেছে খাদ্য সহায়তা, প্রশ্নের মুখে সরকার

প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টানা মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা চরমভাবে বিপর্যস্ত হলেও, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় খাদ্য বিতরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের অকার্যকারিতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে আগের বছরের তুলনায় সরকারি খাদ্য বিতরণ কমেছে ৭ শতাংশেরও বেশি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১১ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা মোট ২৩.৪৬ লাখ টন চাল ও গম বিতরণ করেছে। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণ হয়েছিল ২৫.৩৪ লাখ টন, যা এ বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মন্তব্য করেন, খাদ্য বিতরণ হ্রাসের পেছনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব থাকতে পারে। তিনি এই হ্রাসকে “উদ্বেগজনক” উল্লেখ করে বলেন, মৌলিক সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের বিকল্প কোনো প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, যদিও শীতকালে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় সবজির দাম কিছুটা কমেছিল, তবে গ্রীষ্মকালের নতুন ফসলের উচ্চ মূল্যের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই হার দাঁড়িয়েছে ৯.৩৫ শতাংশে, যেখানে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯.৭০ শতাংশ। ওই মাসে বার্ষিক গড় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১০.২৬ শতাংশ।

এই প্রেক্ষাপটে খাদ্য বিতরণ কমে যাওয়াকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক রায়হান। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাদ্য বিতরণ পরিকল্পনা হ্রাস করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৩.৫৬ লাখ টন, যা কমিয়ে এ অর্থবছরে করা হয়েছে ৩০.৩ লাখ টনে।

অধ্যাপক রায়হান আরও বলেন, এমন মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের উচিত ছিল বরং খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি বাড়ানো। তার মতে, এ ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ব্যয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তির শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, কারণ আইএমএফ মূলত জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর উপর জোর দিয়েছে, সামাজিক খাতে নয়।

তবে আশার বিষয় হচ্ছে, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ওপেন মার্কেট সেলস (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় খাদ্য বিতরণ আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়ে ৯.৪০ লাখ টনে পৌঁছেছে।