
প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক শিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেড। ২০১৪ সালে গাজীপুরের সফিপুরে প্রতিষ্ঠিত বিশাল এই কারখানা কমপ্লেক্সে আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ এবং উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে উচ্চমানের রেফ্রিজারেটরসহ নানা ইলেকট্রনিক ও অটোমোবাইল পণ্য। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী এবং দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে যমুনার পণ্য দেশের ৪৯০টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শক্তিশালী নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থার মাধ্যমে।
কারখানায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ইউরোপীয় প্রযুক্তি ও রোবোটিক সিস্টেমে সজ্জিত অত্যাধুনিক উৎপাদন লাইন। এখানে রয়েছে অটোমেটেড অ্যাসেম্বলি লাইন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইউনিট, প্রযুক্তিগত গবেষণাগার এবং রোবটের মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। পুরো কারখানাজুড়ে রয়েছে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ, উন্নত সিসিটিভি নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ২৪ ঘণ্টা কর্মরত একটি সুসংগঠিত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা।
রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে যমুনা বরাবরই নতুনত্ব এনেছে। বাংলাদেশের বাজারে গ্লাসডোর ফ্রিজের প্রথম প্রবর্তক ছিল যমুনা ইলেকট্রনিকস। প্রতিষ্ঠানটির রেফ্রিজারেটরগুলোতে রয়েছে স্মার্ট কন্ট্রোলিং সিস্টেম, এআই প্রযুক্তি, ইনভার্টার কুলিং, বিল্ট-ইন ব্লুটুথ মিউজিক সিস্টেম, মোবাইল অ্যাপস–নিয়ন্ত্রিত টেম্পারেচার কন্ট্রোল, স্মার্ট ওয়াই–ফাই সাপোর্ট এবং ডিজিটাল টাচ ডিসপ্লে। এসব অত্যাধুনিক ফিচার ভোক্তাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয় এবং স্থানীয় বাজারের চাহিদা ও পরিবেশ বিবেচনায় পণ্যের ডিজাইন ও ফিচার নির্ধারণ করা হয়। বিশেষ করে বিদ্যুৎ সরবরাহের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় এসব ফ্রিজে বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। চীনা প্রকৌশলী সিন হুয়ানের মতে, যমুনার রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, যা শহর ও গ্রামীণ উভয় অঞ্চলের জন্যই উপযোগী।
এই রেফ্রিজারেটরগুলোতে ব্যবহৃত হয় পরিবেশবান্ধব R-600a গ্যাস, যা ওজোনস্তরের ক্ষতি করে না এবং কার্যকর কুলিং সিস্টেম নিশ্চিত করে। এছাড়া রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ডোর গ্যাসকেট, টেম্পার্ড গ্লাস শেলফ, বিল্ট-ইন স্ট্যাবিলাইজারসহ নানা স্বাস্থ্য ও ব্যবহারবান্ধব ফিচার। ছোট, মাঝারি ও বড় আকারে তৈরি হওয়া এসব ফ্রিজে প্রয়োজন অনুযায়ী নানা ধরনের খাবার ও দ্রব্য সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।
কারখানায় রয়েছে একটি উন্নতমানের গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ল্যাব, যেখানে নতুন প্রযুক্তি, ডিজাইন ও উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে নিয়মিত গবেষণা চালানো হয়। এর মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি, নতুন মডেল উদ্ভাবন এবং উৎপাদনের দক্ষতা বাড়ানো হয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেড শুধু একটি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি উদ্ভাবনমুখী, প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব শিল্পযাত্রার প্রতিচ্ছবি, যা বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।