যুক্তরাষ্ট্রসহ শীর্ষ ১০ বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে, তবে শঙ্কাও আছে

প্রতিবেদক: চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে ৭০৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বা ১০৩ কোটি ডলার বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ শীর্ষ ১০টি রপ্তানি বাজারেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বাজারে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের বেশি।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষ ১০ বাজার হলো-
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, ইতালি, কানাডা ও জাপান।
এই ১০টি বাজারে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৮১০ কোটি ডলারের পোশাক, যা মোট রপ্তানির প্রায় ৭৭ শতাংশ। এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, রাজনৈতিক পরিবেশসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শীর্ষ বাজারগুলোতে রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। তবে ভবিষ্যতে এই ধারা টিকিয়ে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ১৭ শতাংশ বাড়লেও এই বাজার নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে আরোপিত পাল্টা শুল্কের স্থগিতাদেশ জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অতিরিক্ত শুল্কের চাপ আসতে পারে। এখনও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় দেশীয় রপ্তানিকারকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে, যা বৈশ্বিক পোশাকের চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জার্মানি: রপ্তানি হয়েছে ৪৫৭ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১০.৩৯% । যুক্তরাজ্য: রপ্তানি হয়েছে ৪০৪ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ৪%।স্পেন: রপ্তানি হয়েছে ৩১৬ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১.৬১%।ফ্রান্স: রপ্তানি হয়েছে ২০১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ৮.৬৫%

বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও যুক্তরাজ্যে রপ্তানির ধারাবাহিকতা, স্পেনে ৩ বিলিয়নের বেশি রপ্তানির রেওয়াজ, এবং ফ্রান্সে গত অর্থবছরে রপ্তানি হ্রাসের পর এবার ঊর্ধ্বগতি, সবই ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।

বিজিএমইএর পরিচালক শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ বলেন, ‘বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের রপ্তানিতে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আমাদের শিল্পের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা বাড়ছে। চীন থেকে ক্রয়াদেশও বাংলাদেশে আসছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় কিছুটা ব্যাঘাত না ঘটলে রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেত।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলা, ক্ষুদ্র কারখানার সক্ষমতা বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়ানো—এসব বিষয় গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে রপ্তানিতে সমস্যা হতে পারে।’

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘বড় কোনো দুঃসংবাদ না থাকলেও ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা উদ্বেগজনক। গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা ও ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা গেলে পোশাক রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যা এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি না নিলে ভবিষ্যতের এই ধারা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।