যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্ক নীতিতে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি উদ্বেগ, আলোচনায় আস্থা হারাচ্ছে বিশ্ব

প্রতিবেদক: গত ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক–যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলে, কী ঘটতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন দেশেই অনিশ্চয়তা ও জল্পনা চলছিল। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এই অনিশ্চয়তার অবসান ঘটালেন। ৮ জুলাই (সোমবার) তিনি ১৪টি দেশকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে কী হারে শুল্ক দিতে হবে।

চিঠির মাধ্যমে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আগের সিদ্ধান্তের ওপর তিনি অনড় থাকবেন। তবে একযোগে বলেন, “শতভাগ অনড় থাকব না”—একটি কৌশলগত অবস্থান বজায় রাখার ইঙ্গিতও দেন। এবারের ঘোষণায় কিছু দেশ আগের তুলনায় কম শুল্ক পেয়েছে, তবে কিছু দেশ অপরিবর্তিত আছে। মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে শুল্ক বরং বেড়েছে।

বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত নতুন শুল্কহার ৩৫ শতাংশ, যা কিছুটা কম হলেও এখনো অত্যন্ত উচ্চ। অন্যদিকে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের জন্য ৩৬ শতাংশ, মিয়ানমারের ৪১, লাওসের ৪০, বসনিয়া ও সার্বিয়ার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ, এবং দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, কাজাখস্তান ও তিউনিসিয়ার জন্য ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আগেই কাঠামোগত চুক্তি করায় সেখানে শুল্ক হার ২০ শতাংশে নামানো হয়েছে। চীনের ক্ষেত্রে এখনো শুল্কহার প্রকাশ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদেরও কিছু ছাড় মিলবে।

ট্রাম্পের চিঠিতে একটি কড়া হুঁশিয়ারিও রয়েছে—যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি হারে শুল্ক আরোপ করবে। তবে, খাতভিত্তিক বিদ্যমান শুল্ক যেমন গাড়ির ২৫ শতাংশ, তা নতুন শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে না বলে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে।

চিঠিপ্রাপ্ত দেশগুলো নতুন আলোচনা শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যেমন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা মন্ত্রিসভার টাস্কফোর্স বৈঠকে বলেছেন, ট্রাম্পের এই একতরফা শুল্ক ঘোষণায় জাপান দুঃখ প্রকাশ করছে এবং নতুনভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে ‘তাৎক্ষণিকভাবে দৃঢ় পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে—যদিও পদক্ষেপের ধরন প্রকাশ করা হয়নি। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা—সব দেশই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে এবং আলোচনার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপ ভুল বাণিজ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।’ তিনি দেশীয় ব্যবসায়ীদের বিকল্প বাজার তৈরির আহ্বান জানান।

মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য বলছে, এসব ১৪ দেশের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে শুধু জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছে প্রায় ২৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

উল্লেখযোগ্যভাবে, দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্লাটিনামের প্রধান সরবরাহকারী, এবং মালয়েশিয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম চিপ সরবরাহকারী। কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রেও চিঠিতে ৩৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে, যদিও তা এপ্রিলের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পাল্টা শুল্ক নীতির প্রভাব শুধু রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর নয়, মার্কিন ভোক্তাদের ওপরও পড়তে পারে। বিশেষ করে গাড়ি, ওষুধ, চিপস, ও ইলেকট্রনিক পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি নিয়ে যে হতাশা ও উদ্বেগ ছিল, তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ এখন নতুন করে আলোচনার সুযোগ চাচ্ছে। তবে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হলে বিশ্ব বাণিজ্যে এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারে সবাই।