যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে চাপে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে। মার্কিন ক্রেতারা এখন এ বাড়তি শুল্কের অংশবিশেষ কিংবা পুরোটা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, ফলে রপ্তানিকারকদের লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে কিংবা তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, আগে পাওয়া ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রেও এখন ৫-১০ শতাংশ মূল্যছাড় দাবি করা হচ্ছে, যা পণ্য রপ্তানির ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ প্রায় ৭৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২,৩২৬টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানান, মার্কিন বড় ক্রেতারা সাধারণত ৫ শতাংশ এবং ছোট ক্রেতারা ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দাবি করছেন। এ অবস্থায় মুনাফা অর্জন প্রায় অসম্ভব। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দেড় থেকে দুই কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে।

প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর জানান, তাঁদের ক্ষেত্রেও কেউ কেউ ৫ শতাংশ, আবার কেউ পুরো ১০ শতাংশ ছাড় দাবি করছেন। ফলে বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বায়িং হাউস উইকিটেক্স-বিডির সিইও এ কে এম সাইফুর রহমান জানান, পাল্টা শুল্ক আরোপের পর একটি মার্কিন ক্রেতা তিন লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত করলেও, পরে তা পুনরায় কার্যকর হয়। তিনি বলেন, চীন থেকে মার্কিন ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসছে, তবে আমাদের সম্পর্কে তাদের জ্ঞান কম। আমরা চারটি নতুন ক্রেতার সঙ্গে আলোচনায় আছি।

সাভারের এসেন্সর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টসের তিন লাখ ডলারের চামড়ার ব্যাগের ক্রয়াদেশ স্থগিত হলেও, শুল্ক স্থগিত হওয়ার পর সেটি আবার কার্যকর হয়। প্রতিষ্ঠানটির এমডি কে এম মুশফিকুর রহমান জানান, বর্তমানে তারা ইউরোপীয় বাজারে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, মার্কিন ক্রেতারা জানতে চাইছেন, আমাদের নীতিনির্ধারকেরা এই শুল্ক ইস্যুতে কী করছেন। কেউ কেউ জানতে চাইছেন, শুল্ক বহাল থাকলে কতটুকু বোঝা আমরা নিতে পারব।তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর জোর দেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময়ে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ২২৩ কোটি ডলারের পোশাক, যেখানে ভিয়েতনাম ৩৮৮ কোটি ও চীন ৩৬০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এখন চাপে থাকলেও, নতুন কিছু মার্কিন ক্রেতার আগ্রহ এবং চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরানোর প্রবণতা সামনের দিনে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। তবে দ্রুত এবং সুসমন্বিত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি, যাতে রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় থাকে।