যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে ঝুঁকিতে বাংলাদেশের ৮০০-র বেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান

প্রতিবেদক :যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে এই বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস না হলে মার্কিন বাজারে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক হিসেবে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ২ হাজার ৩৭৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮০১টি প্রতিষ্ঠান তাদের মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি মার্কিন বাজারে করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকের অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে।

শুধু গত অর্থবছরে এই ৮০১টি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে ৬৬২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ৫০৫ কোটি ডলারের পণ্য—বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির প্রায় ৫৮ শতাংশ।

সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৭৬ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৭৫৯ কোটি ডলারই তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে।

চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান ফরচুন অ্যাপারেলস শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, “বাংলাদেশের শুল্কহার প্রতিযোগী দেশের তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি। তার ওপর ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক দিলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকবে।”

তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতেও শঙ্কা বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, মাসুদ অ্যাগ্রো প্রসেসিং ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে হিমায়িত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ হোসেন জানান, “প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে রপ্তানি স্থগিত রাখে। এখন আবার নতুন করে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।”

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৬৮টি প্রতিষ্ঠান এমন রয়েছে যারা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি করে। আর ৩১৯টি প্রতিষ্ঠান তাদের রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি মার্কিন বাজারে করে।

চট্টগ্রামের আরেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড—যাদের ৮৯ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, “প্রায় তিন দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছি। যদি শুল্কহার ৫০ শতাংশ দাঁড়ায়, তাহলে ক্রেতারা অর্ডার দেবে না—এটা নিশ্চিত। আমরা ৯ জুলাইয়ের বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে আছি।”

বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর, তারা বড় ঝুঁকিতে। একবার এই বাজারে সংকট তৈরি হলে সবাই বিকল্প বাজারে ঝুঁকবে, তখন সেই বাজারেও তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা দেবে।”

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানির গতি কমে যাবে, যার প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তবে এখনও আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার সুযোগ রয়েছে। সময় থাকতেই এই শুল্ক কমানোর ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।