
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন রপ্তানিকারক দেশের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। গত ২ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা কার্যকর থাকলেও ৯ এপ্রিল তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে অতিরিক্ত শুল্ক প্রাথমিকভাবে বহাল রাখা হয়, যার বাস্তবায়ন শুরু হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে।
বাংলাদেশ থেকে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এতে ১১ কোটি ৫৯ লাখ ডলার শুল্ক আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যার গড় হার দাঁড়ায় ২১ শতাংশ। অথচ ২০২৪ সালে একই সময়ে এই হার ছিল ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ, শুল্ক বেড়ে গেছে প্রায় ৪ শতাংশ পয়েন্ট।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ডলারের একটি পণ্যে গড় শুল্ক ছিল ১ দশমিক ৬৭ ডলার, যা ২০২৫ সালের মে মাসে বেড়ে ২ দশমিক ১১ ডলারে পৌঁছেছে। আগামী আগস্ট থেকে ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শুল্ক আদায় করা হয়েছে।
চীন ৫৬ কোটি ডলারের পণ্যে ৩৮ কোটি ডলার শুল্ক (গড় হার ৭০%)।ভিয়েতনাম ১২২ কোটি ডলারের পণ্যে ৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার শুল্ক (গড় হার ২৬%)।ভারত ৪৬ কোটি ডলারের পণ্যে ৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার শুল্ক (গড় হার ২০%)
এই তুলনায় বাংলাদেশের গড় শুল্কহার অপেক্ষাকৃত কম হলেও আগত ৩৫ শতাংশ শুল্ক।
উচ্চ শুল্কের কারণে চীনের রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ৫২ শতাংশ কমে গেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে চীন রপ্তানি করেছিল ১১৬ কোটি ডলারের পণ্য, ২০২৫ সালের মে মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৫৬ কোটি ডলারে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে—২০২৪ সালের মে মাসে রপ্তানি ছিল ৫৭ কোটি ডলার, যা এ বছর ৫৫ কোটিতে নেমে এসেছে।
বিপরীতে, ভিয়েতনাম ১৯ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে রপ্তানি ছিল ১০৩ কোটি ডলার, যা ২০২৫ সালের মে মাসে বেড়ে হয় ১২৩ কোটি ডলার।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চরম বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ পরিস্থিতিতে দর-কষাকষির মাধ্যমে আমাদের শুল্কহার প্রতিযোগী দেশগুলোর মতো সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। নইলে বড় বাজার হারানোর ঝুঁকি থাকবে।”
আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশের পোশাক খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন সামর্থ্যবান কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সুবিধা পুনঃনির্ধারণ এবং সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় বিকল্প বাজার খোঁজা।