
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে রপ্তানিকারকেরা আগেভাগেই কারখানা থেকে পণ্য ডিপোতে পাঠানো শুরু করলে চট্টগ্রামের ২২টি কনটেইনার ডিপোতে তৈরি হয় অভাবনীয় চাপ। বাড়তি কনটেইনার সামলাতে ডিপো থেকে রেকর্ডসংখ্যক কনটেইনার বন্দরে পাঠানো হলেও জট কমছে না।
সূত্র জানায়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী রপ্তানিপণ্যের চাপ বাড়ে। ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা দ্রুত পণ্য গ্রহণে তৎপর হয়ে ওঠেন এবং ১ আগস্টের আগেই পণ্য জাহাজীকরণের চাপ দেন। এতে নির্ধারিত সময়ের এক–দুই সপ্তাহ আগেই রপ্তানিকারকেরা পণ্য ডিপোতে পাঠাতে শুরু করেন।
পরবর্তীতে, ৩১ জুলাই হোয়াইট হাউসের এক আদেশে পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় এবং জানানো হয়, ৭ আগস্টের পর যে পণ্য রপ্তানি হবে, সেগুলোর ওপরই এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে। ফলে ওই সময়ের আগেই রপ্তানি সম্পন্ন করতে হড়কো বন্ধ পড়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে দেশের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্য যায়। সাধারণত পণ্য কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে ডিপোতে আনা হয়, তারপর কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে পাঠানো হয় এবং জাহাজে তোলা হয়। এভাবে মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশ পরিচালিত হয়।
কনটেইনার ডিপো মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কনটেইনার রপ্তানি হয়। কিন্তু গত জুলাই মাসে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয় ৯৯ হাজার কনটেইনার, যার মধ্যে ৮১ হাজার রপ্তানি হলেও বাকি ১৮ হাজার কনটেইনার এখনও রপ্তানির অপেক্ষায়।
কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, “প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজারের বেশি কনটেইনার বন্দরে পাঠিয়ে জাহাজে তোলা হচ্ছে। হঠাৎ চাপ বাড়লেও ডিপোগুলো পণ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা দেখাচ্ছে।”
শিপিং এজেন্টদের মতে, বন্দরে জাহাজজটের কারণে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজেও সময় লাগছে বেশি। জেনারেল কার্গো বার্থ ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে অবস্থানরত জাহাজগুলোতে এই কাজে তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত লাগছে, যেখানে সাধারণত দুই দিনেই শেষ হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৮০ কোটি ডলারের পণ্য, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে গড় ছিল ৬৩ কোটি ডলার।
চট্টগ্রামের এশিয়ান–ডাফ গ্রুপ গত জুলাইয়ে ৭১ লাখ পিস তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যার মূল্য সোয়া ২ কোটি ডলার। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম জানান, “যুক্তরাষ্ট্রে শীতকাল শুরু হওয়ার আগেই শীতের পোশাক পাঠাতে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাল্টা শুল্কের শঙ্কা। ফলে ১ আগস্টের আগেই রপ্তানির চাপ তৈরি হয়।”
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে উৎসব ও মৌসুমি চাহিদা মাথায় রেখে বন্দরে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। এতে করে ক্রেতার হাতে সময়মতো পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা নিয়ে ইতিবাচক বার্তা যাবে।