যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

অনলাইন ডেক্স: গত বছরের শেষ চার মাস—সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত—যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৫৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮.৩৬ শতাংশ বেশি। নভেম্বর মাসে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৪১ শতাংশ।

২০২৪ সালে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় কোনো প্রবৃদ্ধি না হলেও ইতিবাচক ধারা ফিরেছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ০.৭৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে নেমে গিয়েছিল।

শুল্ক আরোপের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে বাড়তি ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করেছে। নতুন ক্রেতারা বাজার বিশ্লেষণ করছেন এবং কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সফরেও আসছেন। এমনকি চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করা কিছু প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের কারখানা ও বায়িং হাউসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

অটেক্সার তথ্যমতে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৭,৯২৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৭১ শতাংশ বেশি। দেশটির বাজারে চীন এখনও শীর্ষ রপ্তানিকারক, যার রপ্তানি ১,৬৫১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ০.৭৯ শতাংশ। ভিয়েতনাম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ১,৪৯৮ কোটি ডলারের রপ্তানিসহ, যা ৫.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। বিশেষ করে, চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, যা ক্রয়াদেশ সরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে সহায়ক হতে পারে।

২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে চীনের কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। পরে ২০২২ সালে এই রপ্তানি বেড়ে ৯৭২ কোটি ডলারে পৌঁছায়, যদিও ২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তা কমে যায়।

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “চীন থেকে কম ও মাঝারি মূল্যের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা বেশি। তবে দামি পোশাকের ক্রয়াদেশ আনতে হলে চীন থেকে স্থানান্তরিত বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনতে হবে, যার জন্য সরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি, বাড়তি ক্রয়াদেশ নিতে হলে গ্যাস-বিদ্যুতের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।”

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি নীতি সহায়তা প্রয়োজন। যদি সঠিক উদ্যোগ নেওয়া যায়, তাহলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে।