যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাবে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আরব আমিরাতে ঝুঁকছেন

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করার পর ভারতের ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। এরপর রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, যা গত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এর প্রভাবে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা নতুন উদ্যোগের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।

ব্যবসা স্থাপন ও সহায়তাসংক্রান্ত পরামর্শক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর ভারতের ব্যবসায়ীদের পরামর্শ নেওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের সিইও বলেছেন, প্রথম ধাপে শুল্কের সময় অনেকেই এটিকে কৌশল মনে করেছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে শুল্ক বাস্তবায়িত হওয়ার পর তারা বুঝতে পেরেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কোনো চুক্তি হবে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্য সংরক্ষণ ও খরচ কমাতে কিছু ব্যবসায়ী আরব আমিরাতে যৌথ উদ্যোগ বা কারখানা স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছেন।

একই ধরনের উদ্যোগ গয়নাখাতে দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এখন আরব আমিরাতে গয়নার ডিজাইন ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে চাইছে। এতে ভারত থেকে সরাসরি রপ্তানি করলে যে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, তা এড়ানো যাবে। যদি শুল্ক স্থায়ী হয়, তবে ভারতের গয়না রপ্তানিকারকরা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা করতে ব্যর্থ হবেন।

২০১৮ সালে ট্রাম্প চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে চীনা উৎপাদকরা ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত হয়।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আরব আমিরাতে উৎপাদন সরালে মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, ৫০ শতাংশ নয়।

দুবাইভিত্তিক গয়না ব্যবসায়ী আনাইল ধানক বলেন, মার্কিন শুল্ক নিয়ে ধৈর্য ধরতে হবে, কারণ ট্রাম্প ক্ষণিকের মধ্যে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেন। বর্তমানে স্বর্ণের দামও অনেক বেশি, তাই নতুন কোনো অঙ্গীকার নেওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাম্প প্রশাসন সব ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ করেনি। ওষুধ ও প্রযুক্তিপণ্য শুল্কের আওতার বাইরে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের আইফোন রপ্তানিতে শুল্ক দিতে হবে না।

আরব আমিরাতের শুল্ক সুবিধা সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন ও মূল্য সংযোজন যদি সেই দেশে হয়, তাহলে রপ্তানি শুল্ক মাত্র ১০ শতাংশ। বারজিল জিওজিৎ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সিইও কৃষ্ণন রামচন্দ্রন এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।

পরামর্শক সংস্থা সোভারিন গ্রুপ জানিয়েছে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় আরব আমিরাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের দিকে আগ্রহী। এমসিএ গালফের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ভেঙ্কটেশ সান্তনাম বলেন, এখানে তাদের জন্য নতুন নীতি ও শুল্ক সুবিধা গ্রহণ করা সহজ হবে।

২০১৮ সালের শুল্ক প্রয়োগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, চীনা উৎপাদকরা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত হয়েছিল। সেখানে শ্রম খরচ কম এবং রপ্তানি সুবিধা বেশি ছিল। ফলে ভিয়েতনামে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) প্রবাহ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।