
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির (বিটিএ) খসড়া অবস্থানপত্র সে দেশে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মতামতের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার এ খসড়া পাঠানো হয়। একই দিনে তৃতীয় দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার জন্য ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) দপ্তরকে আবারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, ‘আমরা আশা করছি শিগগির ওয়াশিংটনের ডাক পাব এবং তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু করব।’ তিনি আশাবাদী যে এ দফার আলোচনা শেষে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা গতকাল আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) সঙ্গেও একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক ও জুতা আমদানিকারক বিভিন্ন কোম্পানিকে প্রতিনিধিত্ব করে এই সংস্থা। বৈঠকে এএএফএ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের বাণিজ্য চুক্তি এখন পর্যন্ত শুধু ইংল্যান্ডের সঙ্গে করেছে; ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের সঙ্গেও এখনো কোনো চুক্তি হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে—শুল্ক, শ্রম অধিকার, পরিবেশ, অ-শুল্ক বাধা, নিরাপত্তা এবং সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্য বৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ বেশি পণ্য আমদানি করলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে থাকা বাণিজ্য ভারসাম্য কিছুটা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। বাংলাদেশের ওপর তখন ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তা ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে এক চিঠিতে জানান, পাল্টা শুল্ক ৩৭ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হবে।
তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশ সরকার প্রক্রিয়াটি যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি এবং মাঝপথে সময় নষ্ট করেছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়, আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, শতভাগের কাছাকাছি বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অবস্থানপত্রে কী আছে তা এখনই বলা যাবে না। এখনো আলোচনা চলছে।’ এর আগে ১২ জুন এনডিএ (নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) করার ফলে বাংলাদেশ এককভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে। এরপর আলোচনায় যুক্ত হন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফে সিদ্দিকী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, মূল নেতৃত্বে এখন আছেন শেখ বশিরউদ্দীন।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। গত রোববার উভয় দেশের মধ্যে বছরে সাত লাখ টন গম আমদানির বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়। পাশাপাশি তুলা, সয়াবিন তেল, এলএনজি ইত্যাদি পণ্য আমদানির দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি বজায় রাখতে লবিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছে। তবে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, লবিস্ট দেশের হয়ে কাজ করে, সংগঠনের হয়ে নয়। সরকারের অনুমোদন ছাড়া লবিস্ট নিয়োগ সম্ভব নয়, আর এনডিএ থাকার কারণে অনুমোদনের সম্ভাবনাও কম।